ফাঁসছেন অর্ধশত ক্যাডার কর্মকর্তা শিক্ষাভবনে জুলাইবিরোধী মিছিল - protidinislam.com | protidinislam.com |
অপরাধ

ফাঁসছেন অর্ধশত ক্যাডার কর্মকর্তা শিক্ষাভবনে জুলাইবিরোধী মিছিল

  প্রতিনিধি ৯ জুলাই ২০২৫ , ১০:৪৭:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলাম ডেস্ক: ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন। শিক্ষা প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র শিক্ষাভবনে জুলাই আন্দোলনবিরোধী একটি মিছিল বের করেন শিক্ষা ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তা।

যে মিছিল থেকে ‘চলছে লড়াই চলবে, শেখ হাসিনা লড়বে’ এবং ‘শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলা কেন, খুনি খালেদা জবাব দে’—এমন নানা স্লোগান দেওয়া হয়। ক্যাডার কর্মকর্তা হয়েও নজিরবিহীন ওই মিছিলে অংশ নেওয়ায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ২১ জনকে ডেকে করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। পাশাপাশি আলোচিত ওই মিছিল আয়োজনের নেপথ্যে থাকা কর্মকর্তাদেরও খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলছে।

শিক্ষার খবর সহ সকল প্রকার খবর সবার আগে জানতে
আমাদের পেইজে ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন সারাক্ষণ

জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবের ১০ মাস পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম শিশির ওই স্লোগানদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে অধিদপ্তর ও প্রকল্পে থাকা ২১ জন ক্যাডার কর্মকর্তাকে ডাকেন গত ২৪ জুন। ব্যক্তিগত শুনানি, তাদের জবানবন্দি এবং ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে আরও ২০-২২ জন ক্যাডার কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় ধাপে শুনানির জন্য ডাকা হতে পারে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়ে কাইয়ুম শিশির মিছিলে নেতৃত্বে দেওয়ায় ডিআইএর ১৬ জনকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করেন। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ না করে শোকজের ফাইল গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই দপ্তরের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘এ যুগের রাজাকার’ উল্লেখ করে মন্তব্য করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এর পরপরই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩ আগস্ট চট্টগ্রামে নওফেলের বাসভবনে হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিবাদে পরদিন ৪ আগস্ট শিক্ষাভবনে বিক্ষোভ করেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। প্রথমে তারা শিক্ষাভবন চত্বরে স্লোগান দিয়ে মহড়া দেন। এরপর প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে ‘চলছে লড়াই চলবে, শেখ হাসিনা লড়বে’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘শিক্ষামন্ত্রীর (নওফেল) বাসায় হামলা কেন, খুনি খালেদা জবাব দে’—এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন, যা শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই দিতে পারেন।

ওই মিছিলে অংশ নেন প্রায় ৪০ জন ক্যাডার কর্মকর্তা, যারা ওই সময় ডিআইএ, মাউশি এবং বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন। তাদের অনেকেই অতীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, অধিদপ্তরকে কোনো তদন্ত পর্যন্ত করতে বলেনি।

শিক্ষাভবনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই দিনের আলোচিত মিছিলে নেতৃত্ব দেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা মুকিব মিয়া, যিনি আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করে কারাগারে আছেন। তবে অন্যরা এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। আর ধরাছোঁয়ার বাইরে মিছিল আয়োজনের নেপথ্যে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক এবং পদাধিকার বলে অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তার (অনিক) দায়িত্বে থাকা কাইয়ুম শিশির কালবেলাকে বলেন, ‘গত বছরের ৪ আগস্ট যে মিছিল হয়েছিল, তা ছিল সরাসরি সরকারি চাকরিবিধির লঙ্ঘন। ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়ে তারা রাজনৈতিক দলের কর্মীর মতো স্লোগান দেয়। এই ঘটনার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো দূরের কথা উল্টো অনেকেই বহাল তবিয়তে প্রশাসনে কর্মরত আছেন। কেউ কেউ আবার প্রাইজ পোস্টিংও পেয়েছেন। এ ছাড়াও ধরা হয়নি কুশীলবদের।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপে ২১ জন ক্যাডার কর্মকর্তাকে ডেকেছিলাম। কার নির্দেশে, কেন মিছিলে অংশ নিয়েছিল, নেপথ্যে কারা ছিল তা জানতে চেয়েছি। প্রত্যেকের বক্তব্য আলাদাভাবে শুনেছি। সেই সূত্র ধরে আরও ২০-২২ জনকে ডাকা হবে। মিছিলের নেপথ্যে থাকা কর্তাব্যক্তিদেরও ডাকা হবে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিপ্লববিরোধী মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার সুপারিশ করা হবে।’

যে আইনে ব্যবস্থা: সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে শৃঙ্খলা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ‘অনিক’ (অফিসার ইনচার্জ) বা অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনায় একজন কর্মকর্তাকে মনোনীত করা হয়। সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতা দিয়েছে। মাউশির ক্ষেত্রে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক এই ‘অনিক’ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।

অনিকের ৫.২ অনুচ্ছেদের ‘চ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত যে কোনো সংবাদ, প্রতিবেদন বা চিঠিপত্রে অভিযোগের উপাদান থাকলে, সেগুলো পরীক্ষা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।’ এই ধারার ক্ষমতাবলেই অনিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকেছেন। এরপর ৭.১ অনুচ্ছেদের খ-এর ‘গ’ ধারায় উল্লেখ আছে, এসব অভিযোগ সম্পর্কিত নথি, প্রতিবেদন, সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র লিখিত/মৌখিক বক্তব্য আকারে গ্রহণ করে তার প্রতিকার করা যাবে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অনিক সাক্ষ্যগ্রহণ ও তদন্ত করতে পারবেন এবং শাস্তির বিধান উল্লেখ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে পারবেন।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক কাইয়ুম শিশির বলেন, ‘অনিকের অনেক ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু প্রয়োগ করেনি। আমি তা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।’

মিছিলের নেপথ্যে ছিলেন যারা : কালবেলার অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত মিছিলটি হয় এমন সময়, যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন শেখ হাসিনার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। যখন শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলা হয় তখন মাউশির তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি), পাঁচজন পরিচালকসহ ২০ কর্মকর্তা মিছিলটির পরিকল্পনা করেন এবং আগের দিন রাতে জুমে মিটিং করে নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষা ভবনের নিচতলার স্টোররুমে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র জমা করা হয়। তৎকালীন ডিজি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাগনে নেহাল আহমেদ অধিদপ্তর এবং মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম প্রকল্পের সবাইকে মিছিলে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন। মিছিলের খরচ বহন করতে প্রকল্পের পিডিদের নির্দেশ দেন শফিউল আজম।

এত অভিযোগের পরও তিনি এখনো রয়েছেন এই শাখার পরিচালক পদে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও নওফেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত এই কর্মকর্তা বর্তমানে নিজেকে জামায়াত ঘরানার বলে পরিচয় দেন। দীপু মনির সঙ্গে তিনি একাধিকবার বিদেশ সফর করেছেন—

এমন তথ্য রয়েছে কালবেলার হাতে। তাকে দ্রুত এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হবে বলে জানা গেছে। ওই মিছিলের নেপথ্যে ছিলেন মাউশির তৎকালীন প্রশিক্ষণ পরিচালক, প্রশাসন ও কলেজ শাখার পরিচালক শাহেদুল খবির চৌধুরী, মাধ্যমিক শাখার পরিচালক সৈয়দ জাফর আলী, মাউশির প্রশাসন শাখার উপপরিচালক এবং সহকারী পরিচালক ও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসেন।

অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য সাবেক ডিজি নেহাল আহমেদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরের একাধিক দিন কল করেও কোনো সাড়া মেলেনি।

তবে পরিকল্পনা শাখার পরিচালক এ কিউ এম শফিউল আজম কালবেলাকে বলেছেন, ‘পুরো অভিযোগ মিথ্যা। আমি মিছিল করতে নির্দেশ দিয়েছি, প্রমাণ করতে পারলে যে কোনো শাস্তি মেনে নেব।’

এ ব্যাপারে অনিক কর্মকর্তা কাইয়ুম শিশির বলেন, যারা স্লোগান দিয়েছিল তারাই শীর্ষ এসব কর্মকর্তার নাম বলেছে।

মিছিলে যারা অংশ নেন : মিছিলের নেতৃত্ব দেন মুকিব মিয়া। সঙ্গে ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ২৯তম বিসিএসের মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার সহকারী পরিচালক আবুল হোসেন কায়েস ও ইউসুফ রহমান, যারা দীর্ঘদিন ধরে মাউশিতে রয়েছেন। গবেষণা কর্মকর্তা সুমন বিশ্বাস, সাবেক ছা্ত্রলীগ নেতা এবং গবেষণা কর্মকর্তা রিয়াদ আরাফাত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম, লেইস প্রকল্পের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, সেসিপ প্রকল্পের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সরকারি সংগীত কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমান, এসইডিপি প্রকল্পের আবদুল করিম সরদার, একই প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা আমিনুর ইসলাম, পরিসংখ্যানবিদ ওয়াহিদুর রহমান ও মাহবুবা ইয়াসমীন, আইসিটি প্রকল্পের কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন, ১০ সরকারি মাধ্যমিক স্কুল প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান শিকদার ও এ বি এম আনোয়ার হোসেনও অংশ নেন আলোচিত ওই মিছিলে। কালবেলার সঙ্গে আলাপকালে কায়েস, সুমন বিশ্বাস, রিয়াদ আরাফাত, ইউসুফ রহমান এবং ওয়াহিদুর রহমান স্লোগান দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তারা পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন।

মিছিলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অংশ নেওয়াদের মধ্যে ১৯ জন রয়েছেন ডিআইএর, যাদের বেশিরভাগ ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। মিছিলে সুর মেলান একই দপ্তরের পরিদর্শক ড. আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রলীগ সহসভাপতি সোহান খানের স্ত্রী পরিদর্শক মনিরা মোর্শেদ। যারা এখনো ডিআইএতে বহালতবিয়তে রয়েছেন। স্লোগানে ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনকিউল হাসানাত, দেলোয়ার হোসেন, মনিরুল ইসলাম মাসুম, শাহিনুর ইসলাম, খ ম মনজুরুল আলম, কে এম শফিকুল ইসলাম, সাদিয়া সুলতানা, আশরাফুল রহমান খান, মো. রিপন মিয়া, সরকার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ দিদার, কামরুন নাহার, সাদিয়া সুলতানা, মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী। যাদের গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।খবর কালবেলা


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

Google News Icon

📢 প্রতিদিন ইসলাম এর সর্বশেষ খবর পড়তে

আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন →

🌍 পৃথিবীর যেকোনো দেশ ও বাংলাদেশের সকল জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় ব্যুরো প্রতিনিধি এবং সকল ইউনিভার্সিটিতে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে।

আগ্রহী পুরুষ/ মহিলা যোগাযোগ করতে পারেন।

📞 মোবাইল: 01717289550 (WhatsApp)
📧 ইমেইল:

masayeedtonmoy@gmail.com

আরও খবর

Sponsered content

🔔 ইসলামিক আপডেট পেতে ইমেইল সাবস্ক্রাইব করুন