প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২৫ , ৬:২৮:৪২
ইসলাম ডেস্ক: তিন দফা দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ব্যাপক পুলিশি বাধার মুখে পড়েন গতকাল বুধবার। শিক্ষার্থীদের ছত্রবঙ্গ করতে দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়াসহ, লাঠিচার্জ ও বেধড়ক মারধর করে পুলিশ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি আক্রমণের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওচিত্র সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে।
আরো পড়ুন:
প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন: নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলবে
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ফেসবুক পেজে পুলিশি আক্রমণের একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে- শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা যে ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। একই দাবি করে ডিএমপি নিউজও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
দেশের সকল জেলা–উপজেলা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শর্তসাপেক্ষে সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
ইমেইল ঠিকানা:
ডিএমপি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, ‘সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলমকে নিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এক ছাত্রের মুখ চেপে ধরার একটি ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে; যা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে’।
এতে আরও বলা হয়, ‘কে বা কারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে উক্ত ছবিটি তৈরি করে জনমনে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। ছবিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় তা সম্পূর্ণ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এবং বাস্তবতা বিবর্জিত’।
ডিএমপি জানায়, ‘একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরির উদ্দেশে তৈরি ছবি ও তা প্রচারের সঙ্গে জড়িতদের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায় ডিএমপি। একইসঙ্গে এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হলো’।
তবে ডিএমপি যে ছবিটি এআই বলে দাবি করেছে তা অসত্য। কারণ ছবিটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সংঘর্ষের ওই সময় একাধিক ফটোগ্রাফার একই ধরনের (মুখ চেপে ধরা) ছবি ক্যামেরায় ধারণ করেছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের (টিবিএস) ফটোগ্রাফার রাজীব ধরের তোলা এই ছবিটি তার গণমাধ্যমেও প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, ফটোগ্রাফার শেখ হাসানের একই রকমের একটি ছবি দিয়ে প্রথম পাতায় খবর প্রকাশ করেছে কালেরকণ্ঠ।
এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটোগ্রাফার জয়ীতা রয় তার ক্যামেরায় তোলা ছবিটি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা ছবিটি প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জয়ীতা যুগান্তরকে বলেন, ‘যমুনার দিকে যাওয়ার পথে হেয়ার রোডে ব্যারিকেড ভেঙে শিক্ষার্থীরা এগোতে থাকলে একপর্যায়ে পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড মারে। তারপর একজন ছাত্রকে তারা ধরে ফেলেন। আমি যে ছবিটা তুলেছি এটা ওই সময়ই তোলা’।
তিনি আরও বলেন, ওই সময় ডেইলি স্টারের অর্কিড, টিবিএসের রাজীব ধর, মানবজমিনের আবু সুফিয়ান জুয়েলসহ অনেকেই এই ছবিটি তুলেছেন।
ফ্যাক্টচেকিংয়ে যা জানা গেল
জয়ীতা রয়ের তোলা ছবিটি অনলাইন ডট হিটপ ডটকমে সার্চ দিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা ছবিটি এআই জেনারেটেড নয়। আর মূল ছবিটি ক্রপ (কেটে) করে ডিএমপির প্রকাশ করা ছবিটিও সার্চ করে দেখা যায়, এটি এআই জেনারেটেড নয়।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি’র বাংলাদেশের সাবেক ফ্যাক্ট-চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ছবিটি এআই জেনারেটেড না। পুলিশ ভুয়া দাবি করছে। এই ছবি রিয়েল, এবং একাধিক রিয়েল ছবি ও ভিডিও দ্বারা সাপোর্টেড। কত বড় দুঃসাহস হলে মানুষকে মেরে আবার সেই মারার দৃশ্যকে এআই জেনারেটেড বলে দাবি করে, ফেসবুকে পোস্ট দেয়?
এ নিয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে এ নিয়ে আমরা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছি।
ডিএমপির শেয়ার করা ছবিটিও এআই নয়
এদিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে এক বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বুধবার রাতে শাহবাগে এসে শিক্ষার্থীদের কাছে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের অতি বলপ্রয়োগের ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবিতে আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে পুলিশের মারমুখী আচরণে নিন্দার জন্ম দিয়েছে। খবর যুগান্তর
সাবস্ক্রাইব না করলে নিউজ পড়তে পারবেন না 📢