জাতীয়

“১৯ জনের দলে আইসিটি শিক্ষক মাত্র ১, বিদেশ যাচ্ছেন পরিচালকের স্ত্রী-শ্যালিকা”

  প্রতিনিধি ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১:০৩:৩৯                        

ইসলাম ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আয়োজিত ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিষয়ে প্রশিক্ষণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। যোগ্য আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কয়েকজন কর্মকর্তার সুপারিশে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য বিশাল সুখবর

অভিযোগ রয়েছে, তালিকায় আইসিটি শিক্ষকদের পরিবর্তে বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, জীববিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকরা মনোনীত হয়েছেন। এমনকি মাউশির একজন পরিচালকের স্ত্রী ও শ্যালিকাকেও প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। তারা কেউই আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নন।

📢 সাংবাদিক নিয়োগ

দেশের সকল জেলা–উপজেলা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শর্তসাপেক্ষে সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

ইমেইল ঠিকানা:


কোরিয়া সরকারের এ প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন মোট ১৯ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন, মাউশির তিনজন এবং বাকি ১৫ জন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। অভিযোগ অনুযায়ী, এই ১৫ জনের মধ্যে ১২–১৩ জনকে মনোনয়ন দিয়েছেন মাউশির দুই পরিচালক এবং একজন সহকারী পরিচালক। তালিকায় থাকা ১৫ শিক্ষকের মধ্যে মাত্র একজন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক। বাকি ১৪ জন অন্য বিষয়ের শিক্ষক।

নিয়ম অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের এ প্রশিক্ষণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন এবং মাউশির দুই কর্মকর্তার অংশগ্রহণের কথা থাকলেও সেই নিয়মও মানা হয়নি। প্রশিক্ষণ নিতে এবার মাউশির তিন কর্মকর্তা যাচ্ছেন। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে প্রার্থী নির্বাচন করায় প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। অনেকেই এটিকে প্রশিক্ষণের বদলে ‘পারিবারিক ট্যুর’ হিসেবে অভিহিত করছেন।

যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার এ প্রশিক্ষণ আইসিটি বিষয়ের ওপর না বলে দাবি করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশিক্ষণ) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটি এক ধরনের কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মতো। এখানে যেকোনো বিষয়ের শিক্ষকরা যেতে পারেন। আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকদের নিতে হবে বিষয়টি এমন না।’ তালিকায় পরিচালকের স্ত্রী-শ্যালিকা রাখা এবং সুপারিশের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকা মাউশি তৈরি করে। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।’

তবে মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের এ দাবি ভিত্তিহীন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশির একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণটি আইসিটি বিষয়ের ওপরেই। বিতর্ক এড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জিও ‘ইনভাইটেশনাল প্রশিক্ষণ’ লেখা হয়েছে।

জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার প্রতিবছর আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এ প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। কেননা প্রশিক্ষণে আইসিটি ছাড়াও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত টুলস ব্যবহার শেখানো হয়। কোরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তারা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জ্ঞান বিতরণ করে থাকেন। প্রশিক্ষণ পাওয়া শিক্ষকরা পরে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন। তবে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করায় এবার এ প্রশিক্ষণ কোনো কাজেই লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক প্রফেসর মো. সাঈদুর রহমান এ তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। তালিকায় প্রার্থী নির্বাচনে সুপারিশ করেছেন সংস্থাটির মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল এবং প্রশিক্ষণ উইংয়ের সহকারী পরিচালক ড. জাহিদা বেগম। এই তিনজনের সুপারিশে প্রশিক্ষণ নিতে কোরিয়া যাচ্ছেন ১২-১৩ জন।

তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ উইংয়ের প্রধান প্রফেসর মো. সাঈদুর রহমানের স্ত্রী ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাবেকা সুলতানা লিপি এবং শ্যালিকা মুন্সিগঞ্জের মেদিনী মন্ডল আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের মোছা. লিজা খানের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া এই পরিচালক এবং তার স্ত্রীর সুপারিশে বিদেশ যাচ্ছেন ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ পারভীন, একই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফারুক আহমেদ, ময়মনসিংহের মুসলিমহাট ইনস্টিটিউটের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার সহকারী শিক্ষক মো. আশরাফুল কবির।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাউশির প্রশিক্ষণ উইংয়ের সহকারী পরিচালক ড. জাহিদা বেগমের সুপারিশে নীলফামারি সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. গোলাম মাজেদ, ভোলা সরকারি মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ফরিদুজ্জামান এবং সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের গণিতের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল হক কোরিয়ায় যাচ্ছেন। জাহিদা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার স্বামী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব পদে রয়েছেন। এ পদকে ব্যবহার করে তিনি মাউশির বিভিন্ন কাজে প্রভাব বিস্তার করেন। প্রশিক্ষণের তালিকা তৈরিতেও তিনি তার স্বামীর পরিচয় ব্যবহার করেছেন।

এছাড়া মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেলের সুপারিশে স্কুলের ৩-৪ জন শিক্ষক এ প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন। যাদের কেউই আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নন। কেবলমাত্র সুপারিশের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের জন্য তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক ড. জাহিদা বেগম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণের তালিকা তৈরিতে আমার কোনো সুপারিশ ছিল না। আমি উইংয়ের ডেস্ক অফিসার হিসেবে যাচ্ছি। জুনিয়র হলেও যেতে হচ্ছে। আমার স্বামী একজন উপসচিব। উপসচিবের তেমন কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি আমার জন্য কেন সুপারিশ করতে যাবেন? তার সুপারিশ মাউশি কেনই বা শুনবে? একটি মহল বিভ্রান্তি তৈরির জন্য আমার নাম সামনে নিয়ে এসেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রশিক্ষণ উইংয়ের পরিচালকের দপ্তরে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সহযোগী অধ্যাপক। অর্থাৎ সিনিয়র শিক্ষক। সে হিসেবে তিনি যাচ্ছেন।’ আইসিটি প্রশিক্ষণে বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষকদের যাওয়া এবং তার শ্যালিকাকে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Google News

প্রতিদিন ইসলাম অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে
Google News ক্লিক করুন।

আরও খবর

Sponsered content

🌟 Subscribe করুন 🌟

সাবস্ক্রাইব না করলে নিউজ পড়তে পারবেন না 📢