ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটাইয়া বাড়িত আইয়াম— আইল ঠিকই, কিন্তু লাশ হইয়া’ - protidinislam.com | protidinislam.com |
জাতীয়

ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটাইয়া বাড়িত আইয়াম— আইল ঠিকই, কিন্তু লাশ হইয়া’

  প্রতিনিধি ১ জুলাই ২০২৫ , ৫:৩৩:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলাম ডেস্কঃ মালয়েশিয়া থেকে ফিরে একদিনও নিজের ঘরে কাটাতে পারেননি নেত্রকোনার সাইফুল ইসলাম (৩২)। দেশে ফিরেই কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ছোট বোনের হাত ধরে। বলেছিলেন, ‘হয় সফলতা, না হয় লাশ হয়ে বাড়ি ফিরব।’ কথাটি সত্যি হয়ে যায়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, সরকার পতনের দিন। রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার সামনে পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন সাইফুল। যার হাত ধরে দিন দুয়েক আগে আন্দোলনে নেমেছিলেন তিনি—সেই ছোট বোন লিমা আক্তারের সামনেই রাস্তায় পড়ে থাকেন নিথর দেহ হয়ে।

সাইফুল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের বাড়ইকান্দি গ্রামের ছেলে তিনি। ১৭ বছর আগে বাবাকে হারানোর পর কিশোর বয়সে সংসারের হাল ধরেন। কৃষিকাজে অভ্যস্ত সাইফুল পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে বছরখানেক আগে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখান থেকেই চলছিল ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে পড়ুয়া ছোট বোন লিমা আক্তারের পড়াশোনা।

ভাইয়ের অপেক্ষায় ছিলেন মা খোদেজা খাতুন, ছিলেন বোন লিমা। দেশে ফেরেন ৩ আগস্ট রাতে। ঢাকায় বিমানবন্দরে ভাইকে জড়িয়ে ধরে চোখ ভিজেছিল লিমার। সেই রাতেই উত্তরা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছিলেন তারা। পরদিনই ভাই-বোন একসাথে যোগ দেন রাজধানীতে চলমান বৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভে। ৫ আগস্ট সকালেও আন্দোলনে অংশ নেন তারা। কিন্তু বিকেলে সেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মুহূর্তেই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে।

উত্তরা পূর্ব থানার সামনে হঠাৎ গুলিবর্ষণ। একটি গুলি সাইফুলের বুকে। বোন লিমার সামনেই লুটিয়ে পড়েন ভাই। বুক থেকে ঝরতে থাকে রক্ত। দৌড়ে যান হাসপাতালে, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সেই রাতেই একটি পিকআপে করে ভাইয়ের নিথর দেহ নিয়ে গ্রামে ফেরেন লিমা। পরদিন গুজিরকোনা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাইফুলকে। জানাজার ময়দানে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তার মা। বলেছিলেন, ‘আমার পুত বাড়ি ঠিকই আইল, কিন্তু লাশ হইয়া।’

সাইফুলের মৃত্যুর পর পরিবারে নেমে আসে নীরব বিষাদের ছায়া। মা খোদেজা খাতুন বারবার শুধু একটিই কথা বলেন, ‘হাসিনার পতন ঘটাইয়া বাড়িত আইয়াম, তুমি চিন্তা করো না।’—এই কথা কইছিল। আমার পুত বাড়িত আইল ঠিকই কিন্তু লাশ হইয়া। মা হইয়া ছেলের লাশ দেহন যে কী কষ্ট এটা বোঝাতে পারব না। আল্লাহ আমারে মৃত্যু দিল না ক্যারে!

বোন লিমা আক্তার বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই ভাইয়াকে পুলিশ গুলি করল। ভাইয়ার পাশে আমি ছিলাম, বুকে গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়া লুটিয়ে পড়েন। বুক দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এখনো বিশ্বাস হয় না ভাই পৃথিবীতে নাই। এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ভুলতে পারছি না।’

লিমা আক্তার বলেন, ‘৩ আগস্ট বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর রাতে আমাকে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কথা বলেন। আমি তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে ভাইয়া বলছিলেন, ‘সফলতা নিয়েই বাড়িতে ফিরবেন, না হয় আমার লাশ যাবে।’ এই কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন লিমা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রুহু জানান, ‘সাইফুল খুবই ভদ্র ছেলে ছিল। সে আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। তার পরিবারের অবস্থা এখন করুণ।’ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকার চেক। সরকার থেকে এসেছে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা এবং একটি সঞ্চয়পত্রের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সন্তানহারা মা খোদেজা খাতুনের কথায়, ‘এই সব কিচ্ছু দিয়াও মোর পুত ফিরে আইবো না।’

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপিড়ীন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাছিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

News Icon

📢 প্রতিদিন ইসলাম এর সর্বশেষ খবর পড়তে

আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন →

🌍 পৃথিবীর যেকোনো দেশ ও বাংলাদেশের সকল জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় ব্যুরো প্রতিনিধি এবং সকল ইউনিভার্সিটিতে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে।

আগ্রহী পুরুষ/ মহিলা যোগাযোগ করতে পারেন।

📞 মোবাইল: 01717289550 (WhatsApp)
📧 ইমেইল: masayeedtonmoy@gmail.com

আরও খবর

Sponsered content