বিশ্লেষকদের মতে এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে নাটকীয় পতনঃ নেপথ্যে "রাজনীতি" - protidinislam.com | protidinislam.com |
জাতীয়

বিশ্লেষকদের মতে এসএসসি ও সমমানের ফলাফলে নাটকীয় পতনঃ নেপথ্যে “রাজনীতি”

  প্রতিনিধি ১০ জুলাই ২০২৫ , ১:১৩:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলাম ডেস্ক: চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ফলাফলে যেন নাটকীয় পতন হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় কমেছে পাসের হার, কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও।

আরো পড়ুন:

শতভাগ ফেল করেছে ১৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী

শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ফলাফল নিম্নমুখীর অন্যতম কারণ হলো ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অবসান’। শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘গোপন নম্বর বাড়ানো নীতির’ বদলে এবার খাতাভিত্তিক প্রকৃত মূল্যায়নের ফলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রস্তুতি ও সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটেছে ফলাফলে।

শিক্ষার খবর সহ সকল প্রকার খবর সবার আগে জানতে
আমাদের পেইজে ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন সারাক্ষণ

তথ্যমতে, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার পাস করেছেন ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী; যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। অন্যদিকে, ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন; যা গত বছরের চেয়ে কমেছেন ৪৩ হাজার ৯৭ জন। গত বছর পাস করেছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শিক্ষা সেক্টর ধ্বংসে যে বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল, এর অন্যতম একটি কারণ ছিল পাবলিক পরীক্ষার খাতার নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া। অর্থাৎ, পরীক্ষার খাতায় কেউ ৭৮ নম্বর পেলে গ্রেড পরিবর্তনের জন্য ২ নম্বর বাড়িয়ে ৮০ করা কিংবা ৩০ নম্বর পেলে ৩৩ করে পাস করিয়ে দেওয়া অলিখিত নির্দেশনা বা উপরের মহলের চাপ ছিল।

তবে এবার সেরকম কোনো নির্দেশনা বা চাপ আসেনি। ফলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন, প্রকৃত মূল্যায়নে সেই ফলাফল তাদের হাতে পৌঁছানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর)-এর অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাজনৈতিক কারণের পাশাপাশি অনেকগুলো কারণে এবার এসএসসির ফল ও জিপিএ-৫ এ বিপর্যয় হয়েছে।

আগে এই অভিযোগটা আমাদের কানে আসতো যে, শিক্ষায় বিগত সরকার উন্নয়ন করছে সেটার দৃশ্যমান কিছু একটা দেখাতে পরীক্ষায় নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া হতো।

‘‘তবে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন-জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের অবস্থা স্থিতিশীল না। এই আন্দোলনে এসএসসি পরীক্ষার্থী অনেকেই অংশ নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তারা তো স্বাভাবিক ছিলেন না। তারা শকড ছিলেন। ফলে স্বাভাবিভাবে পরীক্ষায় খারাপ ফল করবেন।’’—তিনি আরও যোগ করেন।

তিনি বলেন, আমরা একটা সময় ভালো করে টেক্সট বই পড়তাম। এখন এর বাহিরে গাইডসহ অনেককিছু পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া এখনকার টেক্সট বইও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই মূল্যায়ন পদ্ধতিকে দায়ী করছি।

তাছাড়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা নির্ভর, পারিবারিক চাপে শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ পেতেই হবে এমন একটি ধারণা চালু আছে। ফলে এসব চাপ শিক্ষার্থীরা নিতে পারে না। তারা আত্মহত্যার পাথ বেচে নেয় এবং মনে মনে কত শিক্ষার্থী খুন হয়ে যাচ্ছে তা আমরা টেরও পাচ্ছি না।

আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে একযোগে দেশের ১১টি শিক্ষাবোর্ড থেকে এই ফল প্রকাশ করা হয়। ফল ও জিপিএ-৫ বিপর্যয়ের প্রসঙ্গে আজ দুপুরে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সভাকক্ষে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার এহসানুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, আগে কী হয়েছে সেটি আমরা বলব না।

তবে, এখন যে তথ্য দিয়েছি সেটিই প্রকৃত। যা হয়েছে সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের ওপর মহল থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল না। আমাদের বলা হয়েছে, রেজাল্ট হবে সেটিই দিতে হবে। আমরাও পরীক্ষকদের এ অনুরোধ জানিয়েছি। তাদের যথার্থভাবে খাতা মূল্যায়ন করার জন্য বলা হয়েছে।

ফল প্রকাশের আগে বুধবার (৯ জুলাই) শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে শিক্ষার্থীদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন করা হচ্ছে। অর্থাৎ তারা যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে, প্রকৃত মূল্যায়নে সেই ফলাফল তাদের হাতে পৌঁছানো হবে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতীতের মতো রেজাল্ট আর দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা যেভাবে পরীক্ষা দিত, প্রকৃত মূল্যায়নে তাদের রেজাল্ট প্রকাশ করা হতো। কিন্তু গত ১৬ বছরে যে সরকার ছিল, তাদের আমলে সরকারের সাফল্য দেখানোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়িয়ে ফুলিয়া ফাঁপিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হতো।

এমনকি সেই ফলাফল প্রকাশ নিয়ে এক ধরনের ফটোসেশনের আয়োজন ছিল রাষ্ট্র প্রধানের। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ পরীক্ষার ফলাফলের বই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতেন এবং প্রধানমন্ত্রী তখন তাদেরকে নিয়ে ফটোসেশন করে রেজাল্ট প্রকাশ করতেন। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার এটাকে বাহুল্য মনে করছে এবং এটা থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতার প্রকৃত মূল্যায়নে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে রেজাল্ট প্রকাশের কারণে অতীতে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত মূল্যায়ন না হওয়ায় তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। পরীক্ষায় পাশের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও বেশি পরিমাণে দেখানো হয়েছে। আমরা এবার জিপিএ-৫ নয়, প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন দেখতে যাচ্ছি।

বিগত ১৬ বছর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী সরকার ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে পরীক্ষার খাতায় বেশী নম্বর দিয়ে জিপিএ-৫ বেশি দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর স্বার্থরক্ষাকারী অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু।

তিনি বলেন, গতবছরে তুলনায় এ বছর শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে এবং ৪৩ হাজারেরও বেশী পরীক্ষার্থী কম জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না করে দলীয় রাজনীতি, ব্যক্তিস্বার্থে শিক্ষাকে বাণিজ্যে রূপদান ও কোচিং বাণিজ্যকে সম্প্রসারণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত ১৬ বছর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী সরকার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দিয়ে জিপিএ-৫ বেশি দেখিয়েছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এড়িয়ে যেতে পারেনা। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়। সরকারকে ধ্বংসের হাত থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করার অনুরোধ। সুত্র টিডিসি


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

Google News Icon

📢 প্রতিদিন ইসলাম এর সর্বশেষ খবর পড়তে

আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন →

🌍 পৃথিবীর যেকোনো দেশ ও বাংলাদেশের সকল জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় ব্যুরো প্রতিনিধি এবং সকল ইউনিভার্সিটিতে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে।

আগ্রহী পুরুষ/ মহিলা যোগাযোগ করতে পারেন।

📞 মোবাইল: 01717289550 (WhatsApp)
📧 ইমেইল:

masayeedtonmoy@gmail.com

আরও খবর

Sponsered content

🔔 ইসলামিক আপডেট পেতে ইমেইল সাবস্ক্রাইব করুন