জাতীয়

কতদূর! ঐকমত্য কমিশনের ঐক্য!

  প্রতিনিধি ১৮ জুলাই ২০২৫ , ৫:০৭:৩৫                        

ইসলাম ডেস্ক:কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই লক্ষ্যে গত মার্চ মাস থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশে ঐকমত্য তৈরির প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে।

আরো পড়ুন:

এনটিআরসিএ’র১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিলেন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈঠকে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের কিছু বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করলেও অধিকাংশ বিষয়ের কাঠামোগত পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও দ্বিমত থেকেই যাচ্ছে।

শিক্ষার খবর সহ সকল প্রকার খবর সবার আগে জানতে
আমাদের পেইজে ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন সারাক্ষণ

ফলে সংস্কারের প্রস্তাবিত বিষয়গুলো নিয়ে জটিলতাও বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় কমিশনের সদস্যরা বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে তাদের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি তাকে অবহিত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা কমিশন সদস্যদের বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছে না রাজনৈতিক দলগুলো। এখনো ৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের বিষয়ে সুরাহা হয়নি। সেজন্য এসব ইস্যুতে ঘুরপাক খাচ্ছে আলোচনা।

আরো পড়ুন:

অন্য রকম ‘সুখবর’ দিলেন প্রেস সচিব

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে আরও দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে এবং দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করতে হবে। ঐকমত্য কমিশন আগামী রোববার থেকে ফের ধারাবাহিক বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা আলাপকালে কালবেলাকে জানান, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে আশানুরূপ সুরাহা আসেনি। ঘুরেফিরে একই বিষয়ে বারবার আলোচনায় বসতে অনীহাও প্রকাশ করেছে কিছু রাজনৈতিক দল। এজন্য দলগুলো পরস্পরকে দায়ী করছে, যা শুধু আলোচনার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে না, বরং সংস্কার কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ ও বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা নিয়েও জটিলতা তৈরি করছে।

দলগুলোর সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছলে জুলাইয়ের মধ্যেই ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করার লক্ষ্য ছিল কমিশনের। অবশ্য জুলাই মাসের প্রথমার্ধ পেরিয়ে গেলেও মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে একমত হওয়ার বিষয়টি এখনো দৃশ্যমান হয়নি। কমিশনের সহসভাপতির কণ্ঠে এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে হতাশার সুর। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে ৩০ বা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ তৈরির আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

গত সোমবার দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর কাজের অংশীদার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আমরা যদি কোথাও ব্যর্থ হই, সে ব্যর্থতা আমাদের সবার।

কমিশন ব্যর্থ হলে সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা হবে। আমরা চেষ্টা করছি জুলাই মাসের মধ্যে যেভাবেই হোক, একটি যৌক্তিক জায়গায় আসা। এটা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে খানিকটা ছাড় দিয়ে হলেও এক জায়গায় আসা জরুরি।’

জানা গেছে, কিছু প্রস্তাবে ঐকমত্য হলেও কাঠামোগত বিষয়ের ঐক্য নিয়ে দলগুলোর এমন অবস্থানের ফলে যে প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা চলছে, তাতে কতটা সফলতা আসবে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

সংস্কার প্রস্তাবনায় অনেক বিষয়ে নিজেদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসে কিছু কিছু দল যেমন একমত হচ্ছে, আবার কিছু দল নিজেদের অনড় অবস্থান থেকে এক বিন্দুও ছাড় দিচ্ছে না। তবে এখনো আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানে আস্থা রাখতে চায় ঐকমত্য কমিশন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর রাষ্ট্রের মৌলিক খাতের সংস্কারের দাবি ওঠে সর্বত্র। অন্তর্বর্তী সরকার সম্ভাব্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রথমে ছয়টি এবং পরে আরও পাঁচটিসহ মোট ১১টি বিষয়ে কমিশন গঠন করে।

কমিশনগুলোর সুপারিশমালা এরই মধ্যে পৃথকভাবে জমা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের ছয়টি কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মূলত গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি মনোনীত করা হয়। চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক আলোচনায় বসে ঐকমত্য কমিশন।

২ জুন থেকে সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা বা সংলাপ পর্ব। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি যৌক্তিক জায়গায় আনতে চেষ্টা করছে কমিশন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতবেদ রয়েছে। বিশেষ করে এ সরকারে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে।

শুরুর দিকে সংবিধান সংস্কার কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করেছিল। তবে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এনসিসির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়। ফলে সংস্কার কমিশনের দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপরেখার সুপারিশও বাদ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে একটি নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করে।

এতে তাতে ঐকমত্য হয়নি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। গত রোববার বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। পরদিন সোমবার কমিশনের কাছে আলাদা প্রস্তাব জমা দেয় জামায়াতে ইসলামী। আর এনসিপি প্রস্তাব তুলে ধরেছিল গত মে মাসে। এসব নিয়ে আগামী বৈঠকে ফের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে : রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কমিশনের আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধান নিয়ে আইন প্রণয়ন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ ও উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপন—এই সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

যেসব বিষয়ে এখনো অনৈক্য : জানা গেছে, এখনো ৯টি প্রস্তাব অনৈক্য রয়েছে। অনৈক্যের বিষয়গুলো হচ্ছে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত কমিটি (যা আগে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি নামে প্রস্তাবিত ছিল); দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কাঠামো, বিশেষত উচ্চকক্ষের গঠন, সদস্য মনোনয়ন ও নির্বাচনের পদ্ধতি এবং এখতিয়ার’।

পাশাপাশি সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচনের পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্রের মূলনীতি পুনর্বিন্যাস, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নির্দিষ্টকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো ও গঠন প্রক্রিয়ার ইস্যুতেই রয়েছে অনৈক্য।

গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৪তম দিনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে ফের আলোচনা হয়। সংবিধান সংশোধন এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে টানা তিন দিনের বেশি আলোচনা চললেও ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠায় সব দল একমত।

তবে এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে অনৈক্য রয়ে গেছে। কোনো কোনো দল বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যদিকে আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে।

যেহেতু রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছে না, তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে দলগুলো। এ ছাড়া বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, নাগরিকের মৌলিক অধিকারসমূহের সম্প্রসারণ এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারণ সম্পর্কিত প্রস্তাবনাগুলোর ক্ষেত্রেও অনৈক্য আছে। পরবর্তী আলোচনায় এসব বিষয়ে ঐকমত্যে না হলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের মতো অন্য বিষয়গুলোয়ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার কমিশনের ওপর বর্তাবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে কয়েকটি দল অনড় অবস্থানে রয়েছে। ইস্যুটি নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। কিছু ইসলামী দলও পিআর পদ্ধতির পক্ষে।

অন্যদিকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাসহ কিছু ইস্যুতে গত কয়েক সপ্তাহে দেশের রাজনীতির মাঠ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছে, যা ঐকমত্য সৃষ্টির প্রক্রিয়াকেও ব্যাহত করবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত দুদিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) নিজেদের মধ্যে সভা করেছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। বুধবারের সভায় গত ১৪ দিন ধরে কমিশনের সঙ্গে ৩০টি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক আলোচনার বিভিন্ন দিক ও অগ্রগতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নিয়োগ এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার মতপার্থক্য দূরীকরণে সম্ভাব্য প্রস্তাব ও নীতিগত দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোর সঙ্গে বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয়ে একাধিক আলোচনার পরও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি; তাই দল এবং জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে একটি অবস্থানে আসার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দলগুলোর বক্তব্য

দফায় দফায় আলোচনার পরও ঐকমত্যে না পৌঁছানো প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘সব বিষয়ে একমত হতে হবে কেন? জাতীয় ঐকমত্য পোষণ হলে যেসব বিষয়ে একমত হবে, সেসব নিয়ে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হওয়ার কথা। এখন যদি আমাদের বাধ্য করা হয়, সব বিষয়ে একমত হতে, তাহলে তো সেটা ঠিক হলো না।

রাজনীতিতে মতভিন্নতা ও মতপার্থক্য থাকবেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমস্ত বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন একটা সিদ্ধান্তে আসার কথা। সে সিদ্ধান্ত জানানোর পর আমাদের প্রতিক্রিয়া বা সম্মতি-অসম্মতির বিষয়ে জানাতে পারব। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘সব প্রস্তাব আটকে নেই। অনেক বিষয়ে এরই মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। বিশেষ করে ৭০ অনুচ্ছেদ ও কেয়ারটেকার সরকারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। সংবিধান সংশোধন নিয়েও ঐকমত্য হয়েছে। তবে আপার হাউস-লোয়ার হাউস সেটেলড হয়ে গেলে ওইটাতেও আর ঝামেলা থাকছে না।

এরকম মাইনর ও মেজর কিছু বিষয়ে ঐক্য অনৈক্য রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ঐকমত্যের বিষয়ে অগ্রগতি থাকলেও ফলাফল সন্তোষজনক নয়। তবে আশার আলো রয়েছে। মূলত পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ গিয়ে অনৈক্যের অনেক বিষয় উঠে এসেছে। মেজরিটি ভাগ পিআর পদ্ধতির পক্ষে আছে। অল্পসংখ্যক দল পিআর পদ্ধতিকে সমর্থন করছে না।

মূলত যেসব বিষয়ে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা জড়িত, সেখানেই অনৈক্য আছে। এখন সামনে কমিশন কী সিদ্ধান্ত দেবে আর আলোচনা কী হবে, সেটি দেখার বিষয়। আমরা উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি সমর্থন করি (৪০০ আসনসহ)। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী সংবিধানের মৌলিক জায়গাগুলোয় গণভোট চায়।’ ড. হামিদুর রহমান আযাদ আরও বলেন, ‘দেশের স্বার্থ না দেখে দলীয় স্বার্থ দেখলে তো ঐকমত্য হবে না।

গণঅভ্যুত্থান দলীয়করণ ও বৈষম্য তৈরির কারণে হয়েছে। সেজন্য সংস্কার করতে হবে যে, দেশের জন্য কোনটা ভালো। সেখানে দলীয় বিষয় ধরে রাখলে তো ঐকমত্য হবে না। বিপ্লবোত্তর গণআকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলো লালন করে আমরা কাজ করলে সহজেই ঐকমত্য হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘সব বিষয়ে শতভাগ একমত হবে এটি আশা করা ভুল। তবে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কমিশনের উচিত সেসব বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা। তবে আমরা দেখছি যে, কিছু অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনায় এনে সংসদ নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের মোটা দাগের যে বিষয়গুলো আছে, সে প্রশ্নটা উত্থাপিত হলে বিএনপি ও কতিপয় দল সেখানে বাধাবিঘ্ন তৈরি করছে। তারা ঐকমত্যের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু দল মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলোকে সংখ্যায় ফেলে বলছে, সব মানতে হবে; কিন্তু কেন?

এ দৃষ্টিভঙ্গি সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে খর্ব করে। যেসব ছোটখাটো বিষয়ে সব দল একমত, তা নিয়ে সমস্যা নেই; কিন্তু যখন ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, উচ্চকক্ষের ক্ষমতা—এসব মৌলিক বিষয়ে আলোচনা হয়, তখনই বিএনপি পিছিয়ে যায়।’

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার কালবেলাকে বলেন, ‘দেরি হয়ে গেছে তাই ঐক্য হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে তো যে কোনো বিষয়ে গতি বাড়ে-কমে। এখন সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোকে বেশি বেশি মোটিভেট করে আস্থা নিয়ে আসা। এ জন্য ঘনঘন দলগুলোর সঙ্গে বসতে হবে।

সংস্কারের সব ইস্যুতে একমত হতে পারছে না। যেসব রাজনৈতিক দল সমাজের প্রধান অংশীজন, তাদের সঙ্গে বেশি বসতে হবে এবং তাদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। সব দলের গুরুত্ব সমান নয়। কিন্তু সরকার সব দলকে সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এখানে সরকারের একটা বড় ভুল। অবশ্যই সরকারকে আরও দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে।

Google News

প্রতিদিন ইসলাম অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে
Google News ক্লিক করুন।

আরও খবর

Sponsered content