প্রতিনিধি ২৪ জুলাই ২০২৫ , ১:৩৪:৫২
এম এ সাইদ (তন্ময়)ঃ আমি যখন প্রথম শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিই, তখন ভাবিনি—এই পেশা একসময় আমার পরিচয়ের বাইরেও কিছু হয়ে উঠবে। সময়ের পরিক্রমায় বুঝলাম, শিক্ষকতা শুধু পাঠদানের কাজ নয়; এটি একটি আত্মিক বন্ধন, ভালোবাসার সংজ্ঞা, এবং হৃদয়ের গভীরতম মমতার প্রকাশ।
আরো পড়ুন:
যে কারণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর এমপিও বন্ধ হচ্ছে
আজ আমি শিক্ষক, কিন্তু আমার শিক্ষার্থীরা আমাকে কেবল “স্যার” বলে না। তারা আমাকে দেখে—একজন অভিভাবকের চোখে। ক্লাস শেষে কেউ আসে আমার কাছে চোখের পানি নিয়ে, কেউ আসে হাসির মুখে কোন আনন্দের গল্প বলতে। কেউ এসে বলে,
“স্যার, মা-বাবা তো বোঝে না, কিন্তু আপনাকে বললে শান্তি পাই।”
এই একটি বাক্য আমাকে থমকে দেয়—হৃদয়ের গহীনে যেন কেঁপে ওঠে এক অদ্ভুত অনুভূতি।
আমি কী করেছি তাদের জন্য? শুধু একটু সময় দিয়েছি, মন দিয়ে শুনেছি, তাদের কথা গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু সেই ছোট্ট সময়টুকু হয়তো তাদের জীবনে পাহাড় সমান সাপোর্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি তাদের বাবা নই, মা নই, তবুও তারা আমাকে ভাবে তাদের সবচেয়ে আপন।
তারা কাঁদলে আমার চোখ ভিজে যায়,
তারা হাসলে আমি যেন প্রাণ ফিরে পাই।
একদিন এক ছাত্র এসে বলেছিল, “স্যার, আপনি না থাকলে মাদরাসায় আসতেই ভালো লাগে না।”
এই কথা শুনে আমি সেদিন সোজা হেঁটে চলে যেতে পারিনি, কিছুটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছি—হৃদয়ের ভিতরে এক ধরনের কান্না জমা হয়েছিল, তা কেউ টের পায়নি।
আমি জানি না কেন তারা আমাকে এত আপন ভাবে,
কিন্তু এটুকু জানি—শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা বিনিময়ে নয়,
এটি জন্ম নেয় বিশ্বাস আর সম্পর্কের গভীরতায়।
আমি হয়তো শত কষ্টে, ক্লান্তিতে, ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনে পথ চলি,
কিন্তু শিক্ষার্থীদের চোখে যখন নিজের জন্য শ্রদ্ধা দেখি—
সেই চোখের ভাষা আমাকে শক্তি দেয়, সাহস দেয়, বাঁচিয়ে রাখে।
আমি একজন শিক্ষক হলেও, তাদের কাছে আমি একজন ছায়া—
যে ছায়ায় তারা আশ্রয় খোঁজে,
যে ছায়ায় তারা কান্না লুকায়,
আর আশ্বাস পায়—”স্যার আছেন তো!”
—
🔖 উপসংহার:
আমি জানি না, কীভাবে একজন শিক্ষক হয়ে উঠি তাদের অভিভাবক,
জানি না কেন এতটুকু বিশ্বাস তারা আমার মাঝে খুঁজে পায়।
কিন্তু এটুকু আমি নিশ্চিতভাবে জানি—
এই সম্পর্ক বইয়ের পাতায় শেখানো যায় না,
এটি হৃদয়ে জন্ম নেয়, ভালোবাসায় গড়ে ওঠে।
আমার শিক্ষার্থীদের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।
সেই ভালোবাসাই আমার শিক্ষকতা জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার।