জাতীয়

১৩ আগস্টের শিক্ষক সমাবেশের পথে ‘ধর্মঘটের দেয়াল’

  প্রতিনিধি ৯ আগস্ট ২০২৫ , ৫:১৪:৪০                        

এম এ সাইদ (তন্ময়): বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাসে কখনও কখনও কিছু তারিখ কাকতালীয়ভাবে মিলে যায়, আবার কিছু তারিখ এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যে, তা দেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সন্দেহ জাগে।

আরো পড়ুন:

৪০ হাজার কওমি মাদরাসার জন্য বিশাল সুখবর

আগামী ১৩ আগস্টের প্রেক্ষাপট সেই দ্বিতীয়টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেদিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের এক ঐতিহাসিক সমাবেশ—যেখানে জাতীয়করণ, বেতন-ভাতা কাঠামোতে বৈষম্য দূরীকরণ, উৎসব ভাতা, পূর্ণ পেনশন, চাকরির নিরাপত্তা এবং শিক্ষাব্যবস্থায় মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মতো বহুদিনের দাবি তুলে ধরা হবে।

শিক্ষকরা বহু বছর ধরে এসব দাবি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু প্রতিবারই আশ্বাসের ফুলঝুরি শুনে ফিরে গেছেন। এবার তারা সর্বস্তরের শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করে এমন এক শক্তিশালী জনসমাবেশের আয়োজন করেছেন, যা শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শিক্ষকেরা ঢাকায় আসবেন—নিজ খরচে, ছুটি নিয়ে, শুধু নিজের পেশাগত অধিকার আদায়ের জন্য।

ঠিক এই সময়েই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি তাদের আট দফা দাবি আদায়ের জন্য ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করেছে। দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে—বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ৩০ বছর করা, সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা সংশোধন, অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, ১২ বছর বয়সী রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানির অনুমতি, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দ্রুত ফেরত দেওয়া, থ্রি-হুইলার ও অবৈধ যানবাহনের জন্য আলাদা লেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের প্রক্রিয়া সহজ করা ইত্যাদি।

যৌক্তিক বা অযৌক্তিক, এসব দাবি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই ধর্মঘটের সময়সূচি কি শুধু কাকতাল, নাকি শিক্ষকদের এই বিশাল সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টা?

যদি ৭২ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট হয়, তাহলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে চাওয়া হাজার হাজার শিক্ষক বাস, ট্রেন, লঞ্চ—সব ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থায় ভোগান্তিতে পড়বেন। অনেকেই হয়তো আসতেই পারবেন না। এর ফলে সমাবেশের শক্তি ও প্রভাব কমে যাবে—যা হয়তো কারও কাছে কাম্য।


এমন পরিস্থিতি শুধু শিক্ষকদের নয়, পুরো জাতির জন্য উদ্বেগজনক। কারণ শিক্ষা খাতের দাবিগুলো কেবল শিক্ষকদের স্বার্থে নয়; এগুলো দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন শিক্ষক যদি নিরাপদ চাকরি, পর্যাপ্ত বেতন, সামাজিক মর্যাদা না পান—তাহলে তিনি কীভাবে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলবেন?

এখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চাইলে পরিবহন মালিকদের দাবিগুলো নিয়ে দ্রুত আলোচনা ও সমাধান করতে পারে, যাতে একই সময়ে দুটি আন্দোলনের সংঘর্ষ না ঘটে। গণতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেক গোষ্ঠীরই শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানানোর অধিকার আছে—কিন্তু একটির কারণে আরেকটি আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হওয়া গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির পরিপন্থী।

শিক্ষকরা দেশের মেরুদণ্ড, আর পরিবহন খাত জাতীয় অর্থনীতির রক্তস্রোত। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ খাতের আন্দোলন মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলে যে ক্ষতি হবে, তা কেউ পূরণ করতে পারবে না। এখনই সময়—সংঘর্ষ নয়, সংলাপ ও সমঝোতার পথে হাঁটার।

Google News

প্রতিদিন ইসলাম অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে
Google News ক্লিক করুন।

আরও খবর

Sponsered content