প্রতিনিধি ১০ আগস্ট ২০২৫ , ১২:২৪:৫৩
ইসলাম ডেস্ক: মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে বিদেশগামীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য হাতে রেখে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
তারুন্যের অহংকার তরুণদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে : আসিফ মাহমুদ
নুরুজ্জামান অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রাব্বি হোসাইন। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তাদের প্রায় দুই বছর আগে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে পাঠাতে পারেনি।
অন্যদিকে পুরো টাকাও ফেরত না দিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে মাত্র। তারা আবার পাঠানোর চেষ্টা করবে বলে বাকি টাকা দেয়নি। প্রতারিত হওয়ার ভয়ে এ ঘটনার পর এখনো অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সাহস করতে পারিনি। রাব্বি হোসাইনের মতোই শত শত যুবক বিদেশ গিয়ে সংসারের হাল ধরতে আদম ব্যবসায়ী রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে টাকা তুলে দিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছেন।
সূত্র বলছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করে দেয়। এতে মালয়েশিয়ায় যেতে একজন কর্মীর সর্বোচ্চ ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। অথচ জনপ্রতি নেওয়া হয়েছে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে এরচেয়ে বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে সরকারি নির্ধারিত খরচের বাইরে বিদেশগামী কর্মীদের অতিরিক্ত টাকা আদায় বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হলেও এর বাইরে অনেক অপরাধ সামনে আসছে। এর মধ্যে প্রতারণা, মানবপাচারসহ নানা আর্থিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
আরো পড়ুন:
অবশেষে হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো, বললেন ঢাবি উপাচার্য
ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝেতার আলোকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির প্যানেলভুক্ত ১০০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয় প্রায় এক বছর আগে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি এজেন্সির বিপরীতে একাধিক মাধ্যম বা প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জড়িয়েছে। তাদের বাইরেও বিভিন্ন ধাপে আরও দালাল শ্রেণির লোক যুক্ত হয়েছেন। এজেন্সিগুলোর দাবি, তারা অতিরিক্ত কোনো টাকা নেয়নি। কর্মী থকে রিক্রুটিং এজেন্সি পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে থাকা এসব লোক বাড়তি টাকা নিয়ে থাকেন। তবে তারা পরোক্ষভাবে জড়িয়েই এসব লোকের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগিরই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে পৃথক মামলা করে তদন্ত শুরু করা হবে। এছাড়াও অনুসন্ধানে আরও যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও মানবপাচারের মতো নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিআইডির অনুসন্ধানের তালিকায় থাকা ১০০ এজেন্সির মধ্যে রয়েছে-মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিঃ, দ্যা সুপার ইস্টার্ন লিমিটেড, মদিনা ওভারসিজ, আমিন টুর এন্ড ট্রাভেলস, কিউ কে কুইক এক্সপ্রেস লি, ইউনিক ইস্টার্ন (প্রা.) লি, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লি, দাহমাশি কর্পোরেশন লিমিটেড, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, অদিতি ইন্টারন্যাশনাল, সেলিব্রিটি ইন্টারন্যাশনাল, সুলতান ওভারসিজ, প্রভাতী ইন্টারন্যাশনাল, বিডি গ্লোবাল বিজনেস, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, বি এন এস ওভারসিজ লিমিটেড, ট্রান্স এশিয়া ইন্টিগ্রেট সার্ভিসেস লিমিটেড, গ্যালাক্সি করপোরেশন, দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল ফারাহ হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড কনসালটেন্সি, অপরাজিতা ওভারসিজ, আরআরসি হিউম্যান রিসোর্স সার্ভিস লিমিটেড, আল খামিস ইন্টারন্যাশনাল ও আরআর ওভারসিজ লিমিটেড।
দ্য ইফথি ওভারসিজ, দরবার গ্লোবাল ওভারসিজ, ফোর সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কাশিপুর ওভারসিজ, মুবিন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নাভিরা লিমিটেড, জেজি আলফালাহ ম্যানেজমেন্ট, রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেড, দিশারী ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, জিএমজি ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড, আল হেরা ওভারসিজ, ফিউচার ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যানফোর্ড এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এন্ড সন্স লিমিটেড, জান্নাত ওভারসিজ, মিডওয়ে ওভারসিজ লিমিটেড, আহাদ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, দ্য জিএমজি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, আমান এন্টারপ্রাইজ।
আক্তার রিক্রুটিং এজেন্সি, রানওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, এলিগেন্ট ওভারসিজ লিমিটেড, পিএন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি ঢাকা লিমিটেড, আদিব এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল, আকাশ বর্মন, আল রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল, আল বুখারী ইন্টারন্যাশনাল, অ্যামিয়াল ইন্টারন্যাশনাল, বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল, বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড, ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনাল।
ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজ, ইম্পেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেড, আরভিং এন্টারপ্রাইজ, নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল, ঐচি ইন্টারন্যাশনাল, অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ, পাথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল, সরকার ইন্টারন্যাশনাল, শাহীন ট্রাভেলস, স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড, এসওএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস লিমিটেড, সাউথ পয়েন্ট ওভারসিজ লিমিটেড, ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার কনসালটেন্সি, জাহরাত অ্যাসোসিয়েট, ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল, এএনজেড মাল্টিন্যাশনাল, থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ হোল্ডিংস প্রাইভেট লিমিটেড, এশা ইন্টারন্যাশনাল।
ত্রিবেণী ইন্টারন্যাশনাল, হায়দরী ইন্টারন্যাশনাল, মনসুর আলী ওভারসিজ এন্ড ট্রাভেলস, অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল, কমফোর্ট ওভারসিজ কনসালটেন্ট লিমিটেড, নেক্সট ওভারসিজ লিমিটেড, অনন্য অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি, মাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লি., ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেড, কিসওয়া এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, জান্নাত ট্রাভেলস লিমিটেড, বেসিক পাওয়ার এন্ড কেয়ার ওভারসিজ, নাতাশা ওভারসিজ, রমনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, উইন ইন্টারন্যাশনাল, উইনার ওভারসিজ লিমিটেড, এজিএ ইন্টারন্যাশনাল, এমইএফ গ্লোবাল বাংলাদেশ লিঃ, নিউ হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট প্যারাডাইস ও শোস ওভারসিজ।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়াগামী কোনো কর্মীর কাছ থেকে এজেন্সিগুলো সরকার নির্ধারিত টাকার বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেয়নি-এমন মন্তব্যও করেন তিনি।খবর যুগান্তর