প্রতিনিধি ১৫ আগস্ট ২০২৫ , ২:৩৭:১৬
ইসলাম ডেস্কঃ মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের প্রায় সব দফতর ও প্রতিষ্ঠানকে জামায়াতের আখড়ায় পরিণত করে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) অবসরে গেলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। অবসরে গেলেও এই কর্মকর্তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে জোর তদবির চালাচ্ছে জামায়াতের শীর্ষ মহল।
আরো পড়ুনঃ
জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব না, সংস্কারই আগে করব: ড. ইউনূস
জামায়াতের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত থাকায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা টানা ৩১ বছর ছিলেন পদোন্নতি বঞ্চিত। চব্বিশের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলে সহকারী সিনিয়র সচিব থেকে এক লাফে সচিব পদে পদোন্নতি পান তিনি। এরপর থেকেই শুরু হয় শিক্ষা খাতে জামায়াতিকরণ। এবার মাদ্রাসা বিভাগকে জামায়াতিকরণ করা শেষ করে খ ম কবিরুল ইসলামকে দিয়ে পুরো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে জামাতীকরণ করার পায়াতারার অংশ হিসেবে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে জোর তদবির চালাচ্ছে জামাতের শীর্ষ মহল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রত্যাহার হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। খ ম কবিরুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ হয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর পর্যন্ত তদবির চলছে।
মাদরাসা শিক্ষার বিভিন্ন দফতর ও প্রতিষ্ঠান দখলের তথ্য জানিয়ে জামায়াতের এসব দখলের বিরুদ্ধে থাকা শিক্ষকরা জানান, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর ও মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এসব দফতরসমূহ দেশের আলিয়া মাদরাসা, শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে উল্লিখিত দফতরসমূহ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের দ্বারা দখল হয়ে আছে এবং তারা নিজেদের মতাদর্শ বস্তবায়নের জন্য মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ভুল আখ্যা দিয়ে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনসহ শিক্ষার্থীদের আকিদা বিনষ্টের চক্রান্ত করছে। এত্থেকে পরিত্রাণের জন্য অতিদ্রুত এসব দফতরকে জামায়াতের কবল থেকে মুক্ত করার দাবি জানান। তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। একই সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, ডিন, পরিদর্শকসহ উপরস্থ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পদের নেতা। এছাড়াও সেকশন অফিসার, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকসহ অন্যান্য পদে যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের মধ্যে জামায়াত ও শিবির মতাদর্শের ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুুবিধা দেয়া হচ্ছে। দেশে যেসব মাদরাসা জামায়াতে ইসলামীর নেতারা পরিচালনায় রয়েছে, সেখানে নিয়ম বহিভর্‚তভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাদরাসাগুলোর উচ্চস্তরের কামিল শ্রেণিতে বিভিন্ন বিভাগ অনুমোদনের মহোৎসব চলছে
আরো পড়ুনঃ
মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য জরুরি নির্দেশ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে
সর্বজনীন বদলির বিষয়ে কমিটি গঠন
অশান্ত শিক্ষা প্রশাসনে, প্রকাশ্যে পাঁচ গ্রুপ!
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সব কমিটি উপ-কমিটিতে মাদরাসা প্রধানদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়া হয়, সে সব স্তরে শতভাগ জামায়াতিকরণ করা হয়েছে। মাদরাসাগুলো পরিচালনার জন্য দেশের সব মাদরাসার গভর্নিং বডিতে ব্যাপকভাবে জামায়াত নেতাদের মনোনয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোতে জামায়াতকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ একজন কট্টর সালাফি মতাদর্শের যা জামায়াতে ইসলামীর আদর্শের সাদৃশ, এ ছাড়াও রেজিস্ট্র্রার, উপ-রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সব কর্মকর্তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো না কোনো পদভুক্ত নেতা। বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদসহ সব কমিটি, উপ-কমিটিতে জামায়াত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে পরিচালিত হচ্ছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তা জামায়াতে ইসলামী থেকে উঠে এসেছে।
মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ও ভাইস-প্রিন্সিপাল জামায়াত নেতা, তাছাড়া বিভিন্নভাবে দেশের একমাত্র মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শিক্ষকদের জাময়াতিকরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশে তিনটি সরকারি আলীয়া মাদরাসা রয়েছে। বিগত এক বছর যাবৎ এই তিনটি মাদরাসায় যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তারা সবাই জামায়াতের রোকন।
আরবী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসার শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ছত্রছায়ায় সরকারি অর্থ ব্যায় করে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাদরাসা শিক্ষকদের একত্রিত করে সভা-সেমিনার, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের নামে বিগত এক বছর যাবৎ জামায়াতের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন), উপ-পরিচালক (অর্থ) , পরিদর্শকসহ পুরো অধিদপ্তরটিকেই জামায়াতীকরণ করা হয়েছে। এছাড়া “Capacity Development of Madrasah Education” শীর্ষক স্কীমের উপ-পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ এনামুল হক ভূঞাসহ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে এক যোগে আটটি পদে, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে একযোগে ১০টি পদে এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই) এ পদায়নের ক্ষেত্রেও জামায়াত মতাদর্শের করমকর্তাদের পদায়ন করে সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
শুধু মাদ্রাসা বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরেই নয় সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামের হাত ধরে পদায়ন পেয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জামায়াত মতাদর্শের অন্তত ১০ কর্মকর্তা, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ চার পদের কর্মকর্তা।
সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব পদে পদোন্নতি ও পদায়নের আগে অতিরিক্ত সচিব পদে পদায়ন ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক শাখায়। শিক্ষা ক্যাডারদের বদলি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান হোতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মোঃ নুরুজ্জামানকে (১১ মার্চ ২০২৫) বদলি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই যুগ্মসচিবের বদলি বাণিজ্যের অন্যতম সহযোগী ছিলেন ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। মাধ্যমিকের দায়িত্ব থাকাকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার আট অঞ্চলের উপ-পরিচালকের অধিকাংশ পদেই মোটা অংকের অর্থের মাধ্যমে একযোগে পদায়নের বিষয়টিও জেলা শিক্ষা অফিসার ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে চাওর ছিল। এছাড়াও মাধ্যমিকের যে কোন পদায়নের ক্ষেত্রে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের বিষয়টিও ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট।
পাঠ্যবইয়েও জামাতিকরণের সূচনা ড. খ ম কবিরুল ইসলামের হাত ধরেই
খ ম কবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত মার্চ (২০২৫) মাসে গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য সাজ্জাদুর রহমান ওরফে রাখাল রাহা। যেখানে পাঠ্যপুস্তকে পরিমার্জন করে জামাতিকরণ করার খ ম কবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন তিনি। তিনি পুরো বই লিখে ফেলেছেন এবং সেটা চালানোর চেষ্টাও করেন বলেন অভিযোগ করেন রাখাল রাহা। রাখাল রাহা তার ফেসবুক পোস্টে সচিব কবিরুলের বিরুদ্ধে লেখেন, “খ ম কবিরুল সাহেব তার নতুন লেখা বইগুলো উপদেষ্টা স্যারকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু উপদেষ্টা স্যার তাড়াহুড়া করার পক্ষে ছিলেনা। তিনি একটু বিরক্তই হয়েছিলেন বোধ হয়। তাই খ ম কবিরুল সাহেব সেপ্টেম্বরের পর আর এ বিষয়ে কথা বলেননি। তবে কমিটিটা যদি ঘটনাচক্রে বাতিল না হতো, তিনি হয়তো তার উদ্যোগ বাস্তবায়নে আরো বহু কিছু করতেন। খ ম কবিরুল সাহেবদের পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থান বিষয়ক লেখায় ভরে দেওয়ার উদ্যোগের শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো প্রথমত বাংলা, ইংরেজি, সমাজ ইত্যাদি বইয়ের পেছনে গ্রাফিতি ব্যবহার করা হবে। দ্বিতীয় হলো প্রাথমিকের বাংলাতে শহীদদের নিয়ে ১টা, মাধ্যমিকের বাংলাতে পোষ্টার-গ্রাফিতির ভাষা নিয়ে ১টা এবং মাধ্যমিকের ইংরেজীতে গ্রাফিতি নিয়ে ১টা টেক্সট তৈরী করা হবে। টেক্সটগুলো এমন হবে যেন, আমাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ের স্বাভাবিকভাবে প্রতিস্থাপন হয়, অতিরঞ্জন মনে না হয়। এতোটা নিকট ইতিহাসের বিষয় সমাজ বইয়ে আনা কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা মত ছিল। তাছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক টিমের সিদ্ধান্ত ছিল ৭১-এর পরের কোনো ইতিহাস থাকবে না। সুতরাং সমাজ বা ইতিহাস বইয়ে জুলাইকে আনা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন খ ম কবিরুল সাহেব শিক্ষা উপদেষ্টাকে পাশ কাটিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সহ নানা স্থানে বলতে লাগলেন এবং সেখান থেকে নানা সুপারিশ আসতে লাগলো। আমরা সবসময়ই খ ম কবিরুল সাহেবকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এ বিষয়ে এতো অল্প সময়ের মধ্যে যতোটুকু করা সম্ভব এবং যেটা উচিত সেটাই আমরা করার চেষ্টা করছি। তিনি ক্রমাগত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এনসিটিবির উপর চাপ অব্যাহত রেখে চললেন। ইতিমধ্যে খ ম কবিরুল সাহেব জুলাই বিষয়ক টেক্সট নিয়ে বারংবার এনসিটিবি-র উপর তাগাদা দিয়েই চললেন। চেয়ারম্যান সাহেবকে আরো কিছু টেক্সট দিয়ে বললেন, এগুলো প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠ্যবইয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে, তিনি যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।”
জানা যায়, ৫ আগস্টের পরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয় জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা ড. খ ম কবিরুল ইসলামকে। তার মাধ্যমেই শিক্ষা প্রশাসনের কার্যত শুরু হয় জামায়াতিকরণ। তার হাত ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে একে একে নিয়োগ দেয়া হয় জামায়াতপন্থীদের। বাদ যায়নি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা, শিক্ষক নেতারা ও নির্দলীয় শিক্ষক নেতারা সমালোচনা করলেও পরিবর্তন আসেনি কোনো কিছুতেই; বরং এখন আরো বেপারোয়াভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, অধিদফতর ও বোর্ডের বিভিন্ন কমিটিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে জামায়াতিদের।
জানা গেছে, গত মার্চে (২০২৫) অব্যাহতি নেওয়া শিক্ষা উপদেষ্টা বিভিন্ন পদে নির্দলীয়, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করলেও জামায়াতপন্থী খ ম কবিরুল, জামায়াতপন্থী আমলা এবং বেশ কয়েকজন সমন্বয়কের (শিবিরপন্থী) চাপে প্রতিবারই সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলাম জামায়াতপন্থীদের এই আধিপত্যের বিপরীতে মতামত দেয়ায় তাকে এক প্রকার কোণঠাসাই করে রেখেছিলেন সরকার ও সমন্বয়কদের মধ্যে থাকা জামায়াতপন্থীরা। সর্বশেষ গত ১০ মার্চ জামায়াতপন্থীদের চাপে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করতে হয়েছে। বিষণ্ণ মনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছেড়েছেন তিনি।
পাঁচ আগস্টের পর টানা চারটি পদোন্নতি পান ড. খ ম কবিরুল ইসলাম
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপপরিচালক ড. খ ম কবিরুল ইসলাম চাকরিতে যোগদান করেন ১৯৯৩ সালে। এরপর দীর্ঘ ৩১ বছর চাকরি করলেও উপসচিব পদে পদোন্নতি পাননি। জামায়াতের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তিনি পদোন্নতি বঞ্চিত হোন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর একই মাসের ১৩ আগস্ট উপসচিব পদে পদোন্নতি পান তিনি। এরপর একই মাসের ২৫ তারিখে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হন। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অতিরিক্ত সচিব পদে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে যোগদান করেন। এরপর ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে সচিব পদে পদায়ন পান।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে যে তদবির জোরেশোরেই চলছে তা বোঝা যায় ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম কথাতেই। সরকার যদি নতুন কোনো দায়িত্ব দেন তিনি তা পালন করবেন। নিজেই এমন আশা প্রকাশ করেছেন ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে বিভাগের সভাকক্ষে এডুকেশন রিপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এই আশা প্রকাশ করেন।