প্রতিনিধি ১৯ আগস্ট ২০২৫ , ১১:৩৬:৩৫
এম এ সাইদ (তন্ময়): বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় প্যারামেডিকেলদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারদের পাশাপাশি ল্যাব টেকনিশিয়ান, এক্স-রে টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, ডেন্টাল টেকনিশিয়ান কিংবা অপারেশন থিয়েটার টেকনিশিয়ান ছাড়া আধুনিক কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র কল্পনা করা যায় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, হাজার হাজার তরুণ-তরুণী প্যারামেডিকেল ডিগ্রি অর্জন করেও অদৃশ্য এক অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। নেই তাদের জন্য কোনো সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা, নেই ইন্টার্নশিপের সুযোগ, নেই ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা। ফলে প্রশ্ন জাগে—তাহলে তারা এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে কী শিখবে এবং কোথায় কাজ করবে?
—
📌 প্যারামেডিকেলদের অপরিহার্য ভূমিকা
গ্রাম থেকে শহর, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বড় হাসপাতাল—সবখানেই রোগ নির্ণয়, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা, ওটি পরিচালনা কিংবা ওষুধ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্যারামেডিকেলরা হচ্ছেন অগ্রভাগের যোদ্ধা। বাস্তবতা হলো, অনেক সময় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার না থাকলেও প্যারামেডিকেলরা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেন।
—
📌 ডিগ্রির পর অচলাবস্থা
বর্তমানে দেশে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্যারামেডিকেল ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি অর্জন করছে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে তাদের জন্য কোনো বড় চাকরির কাঠামো নেই। সামান্য কিছু পদ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বেসরকারি হাসপাতালে কিছু সুযোগ থাকলেও সেখানে বেতন অতি অল্প, যা জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে তারা ডিগ্রি অর্জন করেও বেকারত্বের চক্রে আবদ্ধ হচ্ছে।
—
📌 ইন্টার্নশিপহীন শিক্ষা
চিকিৎসা শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন। কিন্তু প্যারামেডিকেল শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষ করেও বাধ্যতামূলক ছয় মাস বা এক বছরের ইন্টার্নশিপ পাচ্ছে না। এতে তারা যন্ত্রপাতি চালানো, রোগীর সাথে ব্যবহার কিংবা ডায়াগনস্টিক প্রক্রিয়ায় যথাযথ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে না। শুধু বইয়ের জ্ঞান দিয়ে একজন দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করা সম্ভব নয়।
—
📌 ভাতা থেকে বঞ্চিত
ডাক্তারদের মতো প্যারামেডিকেলরাও হাসপাতালে কাজ করে, কিন্তু তাদের ইন্টার্নশিপ ভাতা নেই। অনেকেই দীর্ঘ সময় বিনা ভাতায় কাজ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিচ্ছে। এতে তারা আর্থিক সংকটে পড়ছে এবং অনেকেই হতাশায় পড়ে যাচ্ছে।
—
📌 সরকারের প্রতি আহ্বান
স্বাস্থ্যসেবাকে টেকসই ও জনবান্ধব করতে হলে প্যারামেডিকেলদের অবহেলার শিকার হতে দেওয়া যাবে না।
১. সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আলাদা পদ সৃষ্টি করতে হবে।
২. বাধ্যতামূলক ছয় মাস থেকে এক বছরের ইন্টার্নশিপ চালু করতে হবে।
৩. ইন্টার্নশিপ ভাতা চালু করতে হবে, যাতে তারা আর্থিক নিরাপত্তা পায়।
৪. ক্যারিয়ার গঠনের পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
৫. বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত করতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে হবে।
—
📌 উপসংহার
প্যারামেডিকেলরা হলো স্বাস্থ্যসেবার নীরব যোদ্ধা। তাদের অবহেলা করা মানে স্বাস্থ্যখাতকে দুর্বল করা। তাই সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবি, অবিলম্বে প্যারামেডিকেলদের চাকরির সুযোগ, বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ এবং ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
আজ যদি আমরা তাদের পাশে না দাঁড়াই, তবে আগামীতে একটি অদক্ষ প্রজন্ম তৈরি হবে, যা দেশের স্বাস্থ্যখাতকে আরও বড় সংকটে ফেলবে।