জাতীয়

বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সঙ্গে আচরণ: সংস্কার নাকি প্রহসন?

  প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০২৫ , ২:৩৮:৫৮                        

এম এ সাইদ (তন্ময়): বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হলো প্রবাসী আয়। বৈদেশিক মুদ্রার যে ভান্ডার নিয়ে সরকার গর্ব করে, দেশের বাজেট যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, উন্নয়ন প্রকল্প যেভাবে এগিয়ে চলে—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন প্রবাসীরা।

আরো পড়ুন:

১৩ জেলা প্রশাসককে ‘অতীব জরুরি’ চিঠি

অথচ দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এই মানুষগুলো দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে অবহেলা, দুর্ব্যবহার ও হয়রানির শিকার হন। প্রশ্ন উঠছে—সংস্কার হয়েছে বললেও আসলে কি কিছু পরিবর্তন হয়েছে, নাকি সবই কেবল প্রহসন?

প্রবাসীর চোখের জল

প্রবাসীরা বছরের পর বছর ঘাম ঝরান মরুভূমির দেশে, সমুদ্রের তীরে, কিংবা আধুনিক নগরে। কারও কারও জীবন কাটে নির্মাণশ্রমিক হয়ে, কারও জীবন ঝুঁকি নিয়ে জাহাজে বা রাস্তায়। সেই অর্থেই বাংলাদেশ টিকে আছে। অথচ দেশের মাটিতে পা রাখার প্রথম মুহূর্তেই যদি তাঁদের চোখে জল আসে, তবে সেটি শুধু একজন মানুষের বেদনা নয়—এটি গোটা জাতির ব্যর্থতা।

প্রবাসীরা যখন বলেন, “বিদেশে বাংলাদেশি পরিচয়ে গর্বিত হই, কিন্তু দেশে ফিরলে বিমানবন্দরে অপমানিত হই”—তখন সেটি শুধু হৃদয়বিদারকই নয়, দেশের ভাবমূর্তিকে ভূলুণ্ঠিত করে।

📢 সাংবাদিক নিয়োগ

দেশের সকল জেলা–উপজেলা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শর্তসাপেক্ষে সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

ইমেইল ঠিকানা:


কাগজে-কলমে সংস্কার, বাস্তবে শূন্যতা

বছরের পর বছর ধরে কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দর সংস্কারের কথা বলে আসছে। নতুন টার্মিনাল, আধুনিক যন্ত্রপাতি, যাত্রীবান্ধব সেবা—এসবের ঘোষণা দেওয়া হয় নিয়মিত। কিন্তু বাস্তবে অভিযোগের শেষ নেই। লাগেজ হারানো, লাগেজ বিলম্বিত হওয়া, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার, অতিরিক্ত অর্থ দাবি—এসব এখনও নিয়মিত ঘটনা।

প্রশ্ন হলো—যদি সত্যিই সংস্কার হয়, তবে কেন আজও প্রবাসীরা একই সমস্যার কথা বলেন? উত্তর স্পষ্ট: সংস্কার হচ্ছে কাগজে-কলমে, কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে না। কারণ দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব পুরো ব্যবস্থাকে অচল করে রেখেছে।

প্রবাসীর সম্মান মানে দেশের সম্মান

একজন প্রবাসী শ্রমিকের সম্মানহানি মানে শুধু তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি দেশের জন্যও কলঙ্কজনক। তাঁরা শুধু টাকা পাঠান না, তাঁরা বিদেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের হাসিমুখে দেশ গর্বিত হয়, তাঁদের কান্নায় দেশ অপমানিত হয়।

প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতির “অক্সিজেন”। তাই তাঁদের সাথে বিমানবন্দরে দুর্ব্যবহার করা মানে অক্সিজেন কেটে দেওয়ার মতো আত্মঘাতী কাজ করা।

সংস্কার কোথায় আটকে যাচ্ছে?

১. দুর্নীতির শেকড়: বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি গেঁড়ে বসেছে। সামান্য একটি লাগেজ তোলার ক্ষেত্রেও টাকার বিনিময়ে কাজ হয়।
২. জবাবদিহির অভাব: কর্মকর্তাদের জবাবদিহি না থাকায় একই অপরাধ বারবার ঘটলেও কেউ শাস্তি পান না।
৩. মানসিকতার সমস্যা: যাত্রীসেবাকে ‘কাজের অংশ’ না ভেবে ‘অধিকার খাটানোর সুযোগ’ মনে করেন অনেক কর্মকর্তা।
৪. প্রযুক্তি ব্যবহার সীমিত: উন্নত প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও মানবীয় হস্তক্ষেপের কারণে অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না।

কী করা দরকার?

দুর্নীতি দমন ও কঠোর শাস্তি: অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রযুক্তিনির্ভর সেবা: লাগেজ থেকে কাস্টমস পর্যন্ত সর্বত্র স্বচ্ছ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মীদের প্রশিক্ষণ: সেবা মনোভাব গড়ে তুলতে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

অভিযোগ গ্রহণ ও সমাধান ব্যবস্থা: প্রবাসীরা যেন সহজে অভিযোগ করতে পারেন এবং দ্রুত সমাধান পান।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা: সব কিছুর মূল হলো সরকার ও কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা। সংস্কার কেবল ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।

উপসংহার

প্রবাসীরা আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাঁদের অবদানেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বিমানবন্দরে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার মানে জাতির সম্মান নষ্ট করা। সংস্কারের নাম কেবল বড় বড় ভবন আর প্রকল্প নয়; সংস্কার মানে মানবিকতা, সম্মান এবং স্বচ্ছ সেবা নিশ্চিত করা।

আজই সময় এসেছে প্রশ্ন করার—আমরা কি সত্যিই প্রবাসীদের সম্মান করতে শিখেছি, নাকি সংস্কারের নামে কেবল লোক দেখানো নাটক করছি? যদি প্রবাসীরা দেশে ফিরে হাসিমুখে বিমানবন্দর ছাড়তে পারেন, তবে সেটিই হবে প্রকৃত সংস্কার। অন্যথায়, সব প্রচেষ্টা নিছক ভাঁওতা হিসেবেই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে।

Google News

প্রতিদিন ইসলাম অনলাইনের খবর পেতে
Google News ক্লিক করুন।

আরও খবর

Sponsered content

🌟 Subscribe করুন 🌟

সাবস্ক্রাইব না করলে নিউজ পড়তে পারবেন না 📢