প্রতিনিধি ১৭ নভেম্বর ২০২৫ , ১২:৪৯:১৪
ইসলাম ডেস্ক: নবিজী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সালামের বেশি প্রসার করো, তাহলে শান্তি ও নিরাপত্তা পাবে।’ সালাম শুধু একটি অভ্যর্থনা নয়, এটি শান্তি ও নিরাপত্তার পথ। যখন আমরা সালাম দিই- তা আমাদের সম্পর্ককে মধুর ও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য সালাম এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যা আমাদের অন্তরে স্নেহ ও প্রশান্তি সৃষ্টি করে। তাই আসুন, সালাম ছড়িয়ে দিয়ে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা করি।
দেশের সকল জেলা–উপজেলা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শর্তসাপেক্ষে সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
ইমেইল ঠিকানা:
সালাম দেওয়া হলো প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নত। যাকে সালাম দেওয়া হয়, তার জন্য সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। সালামের মাধ্যমে আসে শান্তি, নিরাপত্তা এবং সম্পর্কের সুমধুরতা। সালামের প্রসারে একজন মানুষ প্রকৃত মুমিন হয়ে ওঠে এবং এতে রয়েছে জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চয়তাও। তাই আসুন, আমরা সালাম ছড়িয়ে শান্তি, ভালোবাসা ও আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছানোর পথ প্রশস্ত করি। এসবই উঠে এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়-
১. প্রকৃত মুমিন হওয়ারর উপায়
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا . أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ
‘যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তোমরা পরস্পরকে মহববত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিসের প্রতি পথনির্দেশ দেবো না যা করলে তোমরা পরস্পরকে মহববত করবে? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম ৮১, তিরমিযি ২৬৮৮, ইবনে মাজাহ ৩৬৯২)
২. সালামে নেকি বাড়ে
হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ، ثُمَّ جَلَسَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَشْرٌ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَرَدَّ عَلَيْهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: عِشْرُونَ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، فَرَدَّ عَلَيْهِ، فَجَلَسَ، فَقَالَ: ثَلَاثُونَ
‘এক লোক নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম। তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসল। নবী (সা.) বললেন, দশ নেকি। এরপর আরেকজন এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী (সা.) অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসল। তিনি বললেন, বিশ নেকি। অতঃপর আরেকজন এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতাল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী (সা.) তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসল। তিনি বললেন, ত্রিশ নেকি। (ইবনে মাজাহ ৫১৯৫)
৩. জান্নাতে যাওয়ার উপায় সালাম
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
اعْبُدُوا الرَّحْمَنَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَأَفْشُوا السَّلاَمَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ
‘তোমরা দয়াময় রাহমানের ইবাদাত কর, (মানুষকে) খাবার খাওয়াও এবং সালামের অধিক প্রচলন ঘটাও, তবেই নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে।’ (তিরমিজি ১৮৫৫)
৪. সুসম্পর্ক গড়ে দেয় সালাম
হযরত আবু আইউব আনসারী (রা.) বর্ণনা করেন, (রা.) বলেছেন-
لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ، يَلْتَقِيَانِ فَيَصُدُّ هَذَا، وَيَصُدُّ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ
‘কোন মুসলিমের পক্ষে তার কোন ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে, তাদের দু’জনের দেখা সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে, আরেকজন অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম ওই ব্যক্তি যে প্রথম সালাম করবে।’ (বুখারি ৬২৩৭ তিরমিজি ১৯৩২)
৫. সর্বোত্তম কাজ সালাম
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ’আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বলেন-
تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ
‘দরিদ্রদেরকে তোমার খাদ্যদান এবং তোমার পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া।’ (ইবনে মাজাহ ৩২৫৩, নাসায়ি ৫০০০, আবু দাউদ ৫১৯৪)
এ কারণেই সাহাবায়েকেরামের মধ্যে সালাম আগে দেওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা হত। তা-ও হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত-
১. হযরত বশির ইবনে ইয়াসার (রহ.) বলেন, ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার আগে কেউ সালাম দিতে পারত না। (আদাবুল মুফরাদ, আবু আওয়ানা, ইবনে হিব্বান)
২. হযরত জাবের (রা.) বলেন, আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে গমনকারীকে সালাম দেবে এবং পদব্রজে গমনকারী বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। আর দুই পথচারীর মধ্যে যে প্রথম সালাম দেবে সে অধিক উত্তম।
নিঃসন্দেহে, মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রদর্শিত পথে সালামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উক্তি অনুসারে, সালাম হচ্ছে মুসলিম সমাজের মধ্যে শান্তি, ভালোবাসা ও ঐক্যের এক শক্তিশালী মাধ্যম। এই সুন্নাহ অনুযায়ী সালাম দেওয়া, শান্তি ও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া এবং পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের প্রকৃত মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। সুতরাং আমাদের উচিত সালাম শুধু মুখে না বলে বরং আমাদের কাজ ও আচরণেও প্রকাশ করা, যাতে আমরা সত্যিকারের ইসলামিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।











শিক্ষা উপদেষ্টার অনুমোদনের পর অপেক্ষা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর






