প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২৫ , ৬:২৭:০৭
ইসলাম ডেস্ক: বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, আগামী নির্বাচনে দেশে সমৃদ্ধশালী ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন সরকার দরকার। যাতে ইসলাম সমৃদ্ধ হয়। ইসলাম দুর্বল হলে মাদরাসা শিক্ষাও দুর্বল হবে। তাই আমাদের অনুকূলের একটি সরকার দরকার হবে। যারা ইসালামী মূল্যবোধকে লালন করবে। তবে গণভোটের বিষয় জনমনে এখনো বিভ্রান্তি কাটেনি। সেটা সরকার ঠিক করবে। নির্বাচন যথা সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ হলে অন্য দাবি দাওয়াও আদায় করা যাবে।
আরো পড়ুন:
সাত দিনের মধ্যে অবৈধ ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার অপসারণের নির্দেশ
গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনর বরিশাল অঞ্চলের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তবে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বরিশাল বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক ড. মাওলানা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক-এর সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ এম এম বাহাউদ্দিন বলেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সামনে নির্বাচন। দেশে ভয়াবহ আর্থিক সংকট চলছে। আমাদের কাফের ও মোনাফেকদের পার্থক্য বুঝতে হবে। তারা আমাদের পাশে ও মাথার ওপরে বসে আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও এসব মোনাফেকরা আছে। তারা রোজা আর পূজা এক করে কথা বলছে।
তিনি বলেন, যারা আলেম ওলামাদের মূল্যায়ন করবে না, আমরা তাদের সাথে নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল গতকালও বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করবেন। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনিও ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার কথা বলেছেন। শহীদ জিয়া সব ইসলামী দলকে পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে এদেশে একটি সঠিক সরকার ক্ষমতায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম দেশ। বর্তমানে ৩ লাখ শিক্ষক এমপিওভুক্ত। ৪০ হাজার মহিলা শিক্ষিকা রয়েছেন। আগামীতে আরো বাড়বে। আলীয়া মাদরাসায় ছাত্র সংখ্যা ২৭ লাখের ওপরে। আগামী সরকার যদি ইসলামকে লালন করে, তবে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ হবে। আমাদের দাবি আদায় সহজ হবে। আলীয়া ও কওমী বলতে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই এক ও ঐক্যবদ্ধ। মাদরাসায় বসে কোনো দল করবেন না। তিনি আরো বলেন, আমাদের আলেম সমাজের দায়িত্ব অনেক। এ সমাজ আমাদের ঠিক করতে হবে। দেশের ২০ হাজার দরবার এক সাথে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। অনেক সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র সঠিক মানব সম্পদ তৈরি করতে পারেনি বলে উল্লেখ করে তিনি এ লক্ষ্যে শিক্ষক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তারা আপনাদের কাছে আসবে। তবে কোনো মোনাফেক দলের ইচ্ছায় এদেশের মানুষ ভোট দেবে না।
সম্মেলনে মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, ১৯৩৭ সালে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন গঠিত হবার পর থেকে আমরা মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নে কি করেছি, তা আপনাদের বোঝাতে হবে না। তিনি দেশের মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে জমিয়াতের সাবেক সভাপতি মরহুম মাওলানা এমএ মান্নানের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, আজ বিশাল মাদরাসা শিক্ষক সমাজ দেশ ও জাতী গঠনে অসামান্য অবদান রাখছে। তাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শুধু মাদরাসা শিক্ষাই নয়, দেশে ইসলামী আদর্শ সমুন্বত রাখাসহ তার প্রসারেও কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক সময় দেশের গ্রামেগঞ্জে হাউজি আর জুয়া চলত। ’৮৯ সালের ২৮ মে ঢাকায় ইসলামী মহাসমাবেশ করে আমরা এসব বন্ধের দাবি করেছিলাম। ছারছীনার মরহুম পীর ছাহেব ঐ সম্মেলনে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন। এর একদিন পরে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এসব অনৈতিক কর্মকা- বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি রোববারের পরিবর্তে শুক্রবার করাও আমাদেরই দাবি ছিল।
তিনি বলেন, বিগত রমজান মাসে জমিয়াত অফিসে সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ইফতার মাহফিলে এক হয়েছিলেন।
মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী দেশের মাদরাসাসমূহে আরো আরবী শিক্ষক ও কর্মচারীর পদ সৃষ্টিরও দাবি জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা একজন মোনাফেক। তিনি এখন বলছেন এমপিও’র তালিকা করে যাবেন। পরের সরকার এসে তা বাস্তবায়ন করবে। ওনাকে এটা করতে কে বলেছে বলেও প্রশ্ন রাখেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন মওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ শারাফত আলীম। আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ মোবাশি^রুল হক নাঈমের স্বাগত বক্তব্যের পরে ছারছীনা মাদরাসার প্রিন্সিপাল আলহাজ্ব মাওলানা রুহল আমীন আফসারী, মাওলানা মো. খলিলুরর রহমান নেসারাবাদী, মাওলানা আবদুর রব, আলহাজ্ব মাওলানা নেসারুল হক ও ছারছীনা মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ শওকত আলীও বক্তব্য রাখেন। দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে। এ সম্মেলনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা থেকেই বিপুল সংখ্যক মাদরাসা শিক্ষক যোগদান করেন।

















