প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০২৫ , ১:১১:০৪
ইসলাম ডেস্ক: বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, নেতৃত্ব তৈরি ও জাতীয় রাজনীতির মোড়ে মোড়ে ডাকসুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ হিসেবে যাত্রা শুরু করা এই সংগঠন ১৯৫৩ সালে নাম পরিবর্তন করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ বা ডাকসু নামে পরিচিতি পায়।
আরো পড়ুন:
আমরা কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মেনে নেব না: আমিনুল হক
ডাকসুর ইতিহাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই ডাকসুর নেতারা ছিলেন অগ্রভাগে। এই কারণে ডাকসুকে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ বলা হয়ে থাকে।
ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ ঘিরে সরগরম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আজ মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। ডাকসু নির্বাচনে বরাবরই সরব থাকে বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। আজকের পর্বে থাকছে ডাকসুতে বাম সংগঠনগুলোর সাফল্য ও বর্তমান সম্ভাবনা।
দেশের সকল জেলা–উপজেলা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শর্তসাপেক্ষে সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
ইমেইল ঠিকানা:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্র রাজনীতির ধারাটি শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (ছাউ), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (পেছাউ), জাসদ ছাত্রলীগ, বাসদ ছাত্র ফ্রন্ট—এই সংগঠনগুলো একাধিকবার ডাকসুর ভিপি, জিএস ও অন্যান্য পদে জয়লাভ করেছে। তারা কেবল নেতৃত্বেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং শিক্ষা আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রচার, সামরিক শাসনের বিরোধিতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন।
ডাকসুতে বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো প্রথম পূর্ণাঙ্গ জয় লাভ করে ১৯৬৩ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাশেদ খান মেনন ভিপি পদে এবং মতিয়া চৌধুরী জিএস পদে জয় লাভ করেন। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ১৯৬৪ সালের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হন ছাত্র ইউনিয়নের বোরহানউদ্দিন।
পরবর্তীতেও ডাকসুতে সাফল্য ধরে রেখেছিল ছাত্র ইউনিয়ন। ১৯৬৭ সালের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে মাহফুজা খানম এবং জিএস পদে মোর্শেদ আলী জয় লাভ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনেও জয় পায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ওই নির্বাচনে ভিপি হন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং জিএস হন মাহবুবুর রহমান জামান।
এরপর ছাত্র ইউনিয়ন আর জয় না পেলেও ১৯৭৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জয় পেয়েছিল জাসদ ছাত্রলীগ। ভিপি পদে মাহমুদুর রহমান মান্না এবং জিএস পদে আখতারুজ্জামান জয় লাভ করেন। ১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনে বাসদ ছাত্রলীগ থেকে ভিপি হন আখতারুজ্জামান।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৯–৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে বামজোটের প্যানেল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে ভিপি হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং জিএস হন মুস্তাক হোসেন।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলো আলোচনায় থাকলেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। কোনো পদে জয় পায়নি। ওই নির্বাচনে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, জিএস পদে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর এবং এজিএস পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক।
২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো। বামধারার সাতটি ছাত্র সংগঠন একত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। তাদের প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’। এতে ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছেন ২০১৯ সালের শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু এবং এজিএস পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক।
বামধারার ছাত্রনেতাদের দাবি, ডাকসুতে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে তাদের। অতীতে বারবার ডাকসুতে জয়ী হয়েছেন তারা। ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে বামপন্থী ছাত্রনেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এবারও শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তারা।
সাবস্ক্রাইব না করলে নিউজ পড়তে পারবেন না 📢