📰 শিক্ষকের গায়ে রক্ত কেন প্রধান উপদেষ্টা জবাব চাই!

স্টাফ রিপোর্টার ঢাকা:প্রস্তাবনা

“শিক্ষকের গায়ে রক্ত কেন প্রধান উপদেষ্টা—জবাব চাই।”
এই স্লোগানে মুখর এখন সারা বাংলাদেশ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ — সবাই প্রশ্ন তুলছে, কেন দেশের প্রিয় শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণ দাবি জানাতে গিয়ে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের শিকার হলেন?

ঘটনার শুরু

গত ১২ অক্টোবর (রবিবার) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন।
তাদের দাবি ছিল মোট তিন দফা —

1️⃣ মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া,
2️⃣ ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা,
3️⃣ উৎসব ভাতা ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৭৫% করা।

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় “এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট” এবং “বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন”।
দাবিগুলিকে তারা “ন্যায্য ও জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য” বলে উল্লেখ করেন।

—

প্রেসক্লাবে সংঘর্ষ

দুপুরের দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষকরা শাহবাগ–পল্টনমুখী সড়কে বসে অবস্থান নিলে, পুলিশ তাদের সরাতে উদ্যোগ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়।

ফলে কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। আহতদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন বলে জানা গেছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, “কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষক আহত ও পাঁচজন গুরুতর রক্তাক্ত হয়েছেন।”
পুলিশের তরফে অবশ্য বলা হয়, “শিক্ষকরা রাস্তা অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ করে ফেলেছিলেন, তাই ন্যূনতম বল প্রয়োগ করা হয়েছে।”

—

দেশজুড়ে প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পরদিন থেকেই সারাদেশে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
বেশিরভাগ স্কুল–কলেজে ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকের প্রতি সংহতি জানিয়ে স্লোগান তুলছে —

> “শিক্ষকের গায়ে রক্ত কেন প্রধান উপদেষ্টা — জবাব চাই!”

ফেসবুক, টিকটক, এক্স (টুইটার) ও ইউটিউবে এই স্লোগান ভাইরাল হয়েছে।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা হাতে ব্যানার নিয়ে ক্লাসরুম, গেট ও মাঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষকদের পাশে থাকার ঘোষণা দিচ্ছে।

—

সরকারের অবস্থান

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
“সরকার ইতোমধ্যে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা সেটা যথেষ্ট মনে করছেন না।”

তিনি আরও বলেন,

> “আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। পুলিশের পদক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই নেওয়া হয়েছিল।”

অন্যদিকে শিক্ষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন,

> “আমাদের দাবি ন্যায্য। ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা চাইছি — এটা বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। আমাদের বেতন দিয়ে আজ আর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।”

—

শিক্ষক সমাজের ক্ষোভ

দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষক সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন —

> “যে শিক্ষক জাতি গড়েন, তার গায়ে আজ রাষ্ট্রের লাঠি! এ লজ্জা কার?”

আরেক শিক্ষক লিখেছেন —

> “আমাদের রক্ত যদি দাবি আদায়ের উপদেষ্টা হয়, তবে এই রক্তই ইতিহাস গড়বে।”

—

মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া

দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উভয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অ্যামনেস্টির ঢাকা কার্যালয় থেকে জানানো হয়,

> “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বলপ্রয়োগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। সরকারকে সংলাপের পথ খুলতে হবে।”

—

শিক্ষার্থীদের সংহতি ও আন্দোলনের নতুন ধারা

এই ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কর্মসূচি পালন করছে —
কেউ লাল ব্যাজ পরছে, কেউ ব্যানার হাতে দাঁড়াচ্ছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুরের স্কুল–কলেজে একই দৃশ্য:

> “শিক্ষকের গায়ে রক্ত কেন প্রধান উপদেষ্টা — জবাব চাই।”

কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বললেও, তাদের চোখেও ক্ষোভ ও বেদনা স্পষ্ট।

—

পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আলোচনার মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে তারা সচিবালয় অভিমুখে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষকরা আবারও প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করে নিহত ও আহত সহকর্মীদের স্মরণ করেন।

—

বিশ্লেষণ

এই ঘটনার তাৎপর্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয় — এটি সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্ন।
যে শিক্ষক জাতির ভিত্তি নির্মাণ করেন, তার প্রতি রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগ জনগণের নৈতিক বোধে আঘাত হানে।
এ কারণেই আজ “শিক্ষকের গায়ে রক্ত কেন প্রধান উপদেষ্টা” হয়ে উঠেছে এক যুগের প্রতিবাদের ভাষা।

—

উপসংহার

বাংলাদেশে শিক্ষক মানে শুধু পাঠদাতা নয় — সমাজের বিবেক, ভবিষ্যতের নির্মাতা।
তাদের গায়ে যদি রক্ত ঝরে, সেই রক্ত নিঃশব্দে বলে দেয় —
“এই জাতির উপদেষ্টা এখন রক্ত, কারণ বোধহয় বিবেক ঘুমিয়ে পড়েছে।”