আমরা শিক্ষিত বেকার চাই না: শিক্ষামন্ত্রী - protidinislam.com | protidinislam.com |  
জাতীয়

আমরা শিক্ষিত বেকার চাই না: শিক্ষামন্ত্রী

  প্রতিনিধি ১২ ডিসেম্বর ২০২১ , ১২:০২:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ আগামী বছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হতে যাওয়া প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে, সেখানে স্বশিখন ও প্রায়োগিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

আরো পড়ুনঃ

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নতুন যে বার্তা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী

তিনি বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা ডিগ্রি নিয়ে বের হবে, তারা কেউ শিক্ষিত বেকার হবে না।

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল খেলার মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আন্তঃহল বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমরা একটি সম্পূর্ণ নতুন শিক্ষাক্রম শুরু করছি। আমরা আগামী বছর থেকে আমাদের যে নতুন শিক্ষাক্রম, সেটি নিয়ে ‘ট্রাই আউটে’ যাচ্ছি।

এটিকে বিভিন্ন পর্যালোচনা করে পরিমার্জিত করে ২০২৩ সালে আমরা বাস্তবায়ন করব। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এটি পুরো দমে কাজ করবে। এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের স্বশিখন ও প্রায়োগিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রয়োজন। কারণ আজকে আমরা যা শিখছি, সে শিক্ষা হয়ত দু’চার বছর পর আমরা কোনো কাজেই লাগাতে পারব না।

তাই নতুন বিষয় শিখতে হবে, নতুন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রমটি আমরা একেবারেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক করছি। সেখানে বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

দক্ষ এবং যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি করতে চাই আমরা, যারা হবে অভিযোজনে দক্ষ এবং সক্ষম। অর্থাৎ তারা যেকোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। পরীক্ষার চাপ যত কমানো যাবে, পড়াশোনার মান ততই ভালো হবে। তাই আমরাও এ পথেই হাঁটতে চাই। পুরো পড়াশোনাটা হবে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক।

তিনি বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা ডিগ্রি নিয়ে বের হবে, তারা কেউ শিক্ষিত বেকার হবে না। তারা কর্মক্ষম মানুষ হবে, নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি গবেষণা করবে, নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে, জ্ঞানের চর্চা করবে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা করবে। নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করা হবে এবং সেগুলো বাস্তব জীবনে কাজে লাগানো হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটা ‘ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান’ হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যানের আগে একটা ‘একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান’ প্রয়োজন।

একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের কথা মাথায় রেখেই ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। তাহলেই আমরা সত্যিকারে বলতে পারব, আমরা কোথায় যেতে চাই, কীভাবে যেতে চাই, কখন যেতে চাই এবং কী ফল আমি অর্জন করতে চাই একটা নির্দিষ্ট সময় পরে।

এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে দেশকে দিকনির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং আজও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এ বিশ্ববিদ্যালয় দিকনির্দেশক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বঙ্গবন্ধুকে জানা খুব দরকার। এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তাকে জানলে আমরা আমাদের দেশকে জানব। তাকে জানার মধ্য দিয়েই দেশের অতীত ইতিহাস জানা সম্ভব। অতীতকে না জানলে ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করা যায় না। কাজেই আমাদের এ অতীতকে জানার জন্য বঙ্গবন্ধুকে জানা আবশ্যক।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম-মহাসচিব সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্লা মোহাম্মাদ আবু কাওছার, আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ), মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক এ. কে. এম. আফজালুর রহমান বাবু, কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান রাশিদুল হাসান, প্রচার ও যোগাযোগ সম্পাদক ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতার সমন্বয়ক কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।

এতে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা, ঢাবি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন এবং ডিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মঞ্জুরুল ইসলাম।

সভাপতির বক্তব্যে এ. কে. আজাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন দেশের জন্য ভেবেছেন। দেশের মানুষের জন্য ভেবেছেন। দেশের মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু গবেষক সুভাষ সিংহ রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবনের ৪৬ শতাংশ সময় পার্টি ও অন্যান্য সাংগঠনিক কাজে, ৪০ শতাংশ সময় কাটিয়েছেন জেলখানায় আর মাত্র ১৬ শতাংশ জীবন কাটিয়েছেন নিজের ব্যক্তিগত কাজে। এই ছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু।

এসময় তিনি ঢাবি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।

তিনি দেশের বেকার সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, দেশে প্রায় তিন কোটি শিক্ষিত বেকার রয়েছে। অথচ প্রতিবছর বিদেশ থেকে অনেক লোকবল আনতে হয়। তারা দেশের অনেক টাকা নিয়ে যায়। এ জন্য সারাদেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রয়োজন। এসময় তিনি একটি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে যে ধরনের শিক্ষাক্রম দরকার, তেমন শিক্ষাক্রম চালু করার দাবি জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়।

অতিথিদের আলোচনা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থী ফাতেমা ফারজানা নির্জনা, দ্বিতীয় হয়েছেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবুজর গিফারী জনি এবং তৃতীয় হয়েছেন শামসুন নাহার হলের হামিদা নিশা।

পুরস্কার বিতরণ শেষে সেখানে ‘মুজিব আমার পিতা’ শীর্ষক দ্বিমাত্রিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে গান পরিবেশন করেন ব্যান্ড দল ‘জলের গান’। খবর সমকাল

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH