খালেদা জিয়ার জন্য যতটুকু করার ছিল, করেছি: প্রধানমন্ত্রী - protidinislam.com | protidinislam.com |  
অপরাধ

খালেদা জিয়ার জন্য যতটুকু করার ছিল, করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  প্রতিনিধি ৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ১:০৩:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) বাড়িতে থাকতে দিয়েছি, ইচ্ছেমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিয়েছি। এটাই কি যথেষ্ট নয়? এটা করে আমরা কি অনেক বড় উদারতা দেখাইনি? তারা (বিএনপি নেতারা) আর কী আশা করে?’

আরো পড়ুনঃ
এবার ‘ঘর’ থেকেও বহিষ্কার ডা. মুরাদ

বিএনপির আন্দোলনের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর আন্দোলন করার একটা সুযোগ পেয়েছে। খুব ভালো, তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু আমার যতটুকু করার ছিল, সেটা কিন্তু করেছি।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বড় বোন, বোনের স্বামী এবং ভাই আমার কাছে এসেছিলেন। সেই সময়ে শেখ রেহানাও আমার সঙ্গে ছিল। তারা আসায় আমি তখন নির্বাহী ক্ষমতাবলে যতটুকু পারি, তা করেছি। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকতে এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে আধুনিক ও ব্যয়বহুল হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। আবার তারেকের স্ত্রীও তো ডাক্তার। শুনেছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। তাহলে সমস্যা কোথায়?’

জিয়ার পথ অনুসরণ করে জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনে খালেদা জিয়ার উদ্যোগ এবং তার রূঢ় ও অমানবিক আচরণের বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করি, তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে, সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া আমাদের সঙ্গে কী আচরণটা করেছে?

বিএনপির আমলে কারাবন্দি আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনা কর্মকর্তাদের চিকিৎসার সুবিধা না দেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আরো পড়ুনঃ

আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড

তিনি বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে সিএমএইচে চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেয়নি বিএনপি সরকার। তাকে আইসিইউ থেকে স্ট্রেচারে কোর্টে নিয়ে মামলার জন্য হাজির করা হয়েছিল। তার প্রমোশনও বাতিল করে দেয়। সেনাবাহিনীর নারী সৈনিক হিসেবে প্রথম ব্যাচে এই জেনারেল মোস্তাফিজের ছোট মেয়ে প্রমোশন লাভ করে। নিয়ম থাকলেও তার মা-বাবাকে খালেদা জিয়ার সরকার পাসিং আউট প্যারেডে উপস্থিত থাকতে দেয়নি। এরশাদকে কারাগারে বন্দি রেখেছে। কোনোদিন চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি, রওশন এরশাদকেও দেয়নি। এই হচ্ছে খালেদা জিয়ার চরিত্র।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া নিজেও সাজেদা চৌধুরীকে অপারেশনের পর ব্যান্ডেজ নিয়েই কারাগারে পাঠিয়েছিল। মতিয়া চৌধুরীর টিবি হলেও তাকে কারাগার থেকে রেহাই দেয়নি। বাহাউদ্দিন নাছিম থেকে শুরু করে মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবের হোসেন চৌধুরী, শেখ সেলিমসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে বিএনপির হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছে। নাছিমকে এমন অত্যাচার করেছিল যে, তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর এমন অত্যাচার-নির্যাতনের ভিডিও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেখতো এবং তা দেখে উৎফুল্ল হতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের হিংস্র একটি চরিত্র আমরা দেখেছি তার মাঝে (খালেদা জিয়া)।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এখন উদারতা দেখাচ্ছি। অথচ এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে দোষী সাব্যস্ত হওয়া খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার দিনে ভুয়া জন্মদিন পালন করছে। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে যারা ভালোবাসেন, তাদের কষ্ট দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে। এমন অমানবিক অপরাধের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।’

‘১৫ আগস্ট সে জন্মদিন পালন করে। অথচ জিয়ার সঙ্গে তার ম্যারেজ সার্টিফিকেট বা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পাসপোর্টেও তার যে জন্মতারিখ ছিল বা তার মায়ের বিবৃতি অনুযায়ী জন্মতারিখটা ১৫ আগস্ট নয়। তার চার-পাঁচটা জন্মতারিখ রয়েছে, জন্মসাল নিয়েও অনেক বিভ্রান্তি’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৃশংস ওই ঘটনার আগে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল- ‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনোদিন বিরোধীদলের নেতাও হতে পারবে না। আগামী ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’ আল্লাহর কী কুদরত, যে কারণে হয়তো খালেদা জিয়াই আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারেনি, বিরোধীদলের নেতাও তো হতে পারেনি। যেটা সে আমাকে, আওয়ামী লীগকে নিয়ে বলেছিল, সেটা তার ওপর এবং তার দলের ওপরে ফলে গেছে।

সরকাপ্রধান বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তারা ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা-গুম, নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার, জেল-জুলুম, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং বাংলা ভাই সৃষ্টি করে।’

কোকো মারা যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার বাড়িতে গিয়ে ফিরে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেল। প্রধানমন্ত্রী হয়েও একজন মা হিসেবে তাকে সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলাম আমি। তারা আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো।’

তিনি বলেন, ‘যখনই আমার গাড়িটা বাড়ির সামনে গিয়ে থেমেছে, এসএসএফ-এর অফিসার জাস্ট ভেতর থেকে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে আমাকে নিতে, সঙ্গে সঙ্গে দরজাটা বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেওয়া হলো। গাড়ি থেকে নেমে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ঢুকতে পারিনি। সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি জানাতে গিয়েও আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে।’

যুবলীগ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক, জ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রগতিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে নিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি এবং বিশিষ্ট বাউলশিল্পী শফি মণ্ডল।

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH