জাল সনদে চাকরি হারাচ্ছেন টাংগাইল ও জয়পুরহাটের যে সকল শিক্ষক - protidinislam.com | protidinislam.com |  
অপরাধ

জাল সনদে চাকরি হারাচ্ছেন টাংগাইল ও জয়পুরহাটের যে সকল শিক্ষক

  প্রতিনিধি ৩ জুন ২০২৩ , ৬:১২:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্ক: জাল সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগে জয়পুরহাটের ৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নি‌র্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ৬ শিক্ষককে ফেরত দিতে হবে ৮৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। শুধু ওই ১১ শিক্ষকই নন, সারা দেশে ৬৭৮ শিক্ষক জাল সনদে বছরের পর বছর চাকরি করে আসছেন।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দেশব্যাপী এক জরিপ করে এর সত্যতা পায়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব সেলিম শিকদার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। তারপরই জয়পুরহাটে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, এ পর্যন্ত যে শিক্ষক যত বেতন তুলেছেন তা ফেরত দিতে হবে। তাতে জয়পুরহাটের ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হ‌য়ে নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন। আর অন্য ৫ জন অন্য পাঁচ শিক্ষক ননএমপিও। তারা কোনো সরকারি আর্থিক সুবিধা পাননি।

জাল সনদে এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষকরা বেতন বাবদ সরকারি তহবিল থেকে নেয়া বেতন অবৈধভাবে গ্রহণ করেছেন। তাদের অবৈধভাবে গ্রহণ করা বেতন সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া, যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করা, স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের মাধ্যমে আদায় করা, জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

জেলার এম‌পিওভুক্ত যেসব শিক্ষক‌দের টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হ‌য়ে‌ছে তা‌দের ম‌ধ্যে রয়েছেন— আক্কেলপুরের পুণ্ডুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ) মোছা. রমনা পারভীন, সদরের পল্লীবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) লিপি আরা, চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) লতিফা খানম, পাঁচবিবির জাবেকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোসা. নূরে জেসমিন, কালাইয়ের মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোছা. শিরিন আক্তার ও সদরের শাহাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) মোছা. শাহীন সুলতানা।

মোছা. রমনা পারভীনকে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪০ টাকা, লিপি আরাকে ১৭ লাখ ৩০ হাজার, লতিফা খানমকে ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৫০ টাকা, মোসা. নূরে জেসমিনকে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬০ টাকা, মোছা. শিরিন আক্তারকে ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৮১৩ টাকা ও মোছা. শাহিন সুলতানাকে ৪ লাখ ২০ হাজার ৯০৩ টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ননএমপিও পাঁচ জাল সনদধারী শিক্ষক হলেন— জামালগঞ্জ কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মোছা. সালমা জাহান, একই প্রতিষ্ঠানের হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক মোছা. মনিরা খাতুন, পাঁচবিবি মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আল আমিন রাজু এবং সদরের শাহাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) রুমানা পারভীন।

কালাইয়ের মোসলেমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোছা. শিরিন আক্তার বলেন, অফিসের কাজে জেলা শহরে আছি। এ ধরনের কোনো চিঠি পাইনি।

পল্লীবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) লিপি আরার সনদ জাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে লিপি আরা বলেন, বগুড়ায় অবস্থিত জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমীর (নেকটার) ‌সা‌র্টিফি‌কেট যাচাই করে যোগদান করা হয়েছে। এখনও মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

ননএমপিও তালিকায় থাকা জয়পুরহাট মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আল আমিন রাজু ব‌লেন, আমি প্রথমে মাস্টার রোলে যোগদান করেছিলাম। পরে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদান করি। কিন্তু অডিটের সময় আমার নামে ওই পদই ছিল। তাই এমনভাবে নাম এসেছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত মোহা. আব্দুর রাজ্জাক প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জাল সনদধারী শিক্ষক‌দের বিষয়টি জেনেছি। সারা দেশে ৬৭৮ শিক্ষককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এমন নি‌র্দেশনা‌টি অফি‌সিয়া‌লি এখনও আসেনি। আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাল সনদে নিয়োগ: চাকরি হারাচ্ছেন টাঙ্গাইলের ১২ শিক্ষক

জাল সনদ দিয়ে শিক্ষকতা করায় চাকরি হারাচ্ছেন টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১২ শিক্ষক। একই সঙ্গে সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতাসহ গৃহীত সব টাকা তাদেরকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখা তদন্ত করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬৭৮ শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করার বিষয়টি ধরা পড়ে।

মাউশির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসব শিক্ষককে চাকুরিচ্যূত করার পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকে নেয়া সব টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার সুপারিশ করা হয়।

তাদের মধ্যে টাঙ্গাইলের ১২ শিক্ষকের জন্যও একই সুপারিশ করা হয়েছে। ফৌজদারি মামলার সুপারিশও করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব মো. সেলিম সিকদার কর্তৃক গত ১৮ মে তারিখে স্বাক্ষরিত তালিকা থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২ শিক্ষক জাল সনদ দেয়ার কারণে চাকরি হারাচ্ছেন।

তারা হলেন- কালিহাতী উপজেলার কালিহাতী আরএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. ইদ্রিস আলী, একই উপজেলার এলেঙ্গাস্থ শামসুল হক ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মুহাম্মদ মসলিম উদ্দিন, নাগরপুর যদুনাথপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত ও বিজ্ঞান) মো. জাহাঙ্গীর আলম, একই উপজেলার আনোয়ারা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. মাসুদ রানা, ঘাটাইলের সন্ধানপুর গণ-উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. মমিনুল ইসলাম, মধুপুরের কালামাঝি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) ইমদাদুল হক, ধনবাড়ীর কদমতলী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোছাম্মৎ নুরুন্নাহার, গোপালপুরের নলীন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. মহসিনুজ্জামান খান, ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) আমিনা আক্তার, মো. রকিবুল হোসেন, মো. তামামুল ইসলাম এবং সখীপুরের রাজাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) ফরিদা ইয়াসমিন।

সুপারিশ অনুসারে মো. ইদ্রিস আলীর কাছ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকা, মুহাম্মদ মসলিম উদ্দিনের কাছ থেকে ৬ লাখ ২৫ হাজার ৬২৫, জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ১৪০, মোছাম্মৎ নুরুন্নাহারের কাছ থেকে ৫ লাখ ১৯ হাজার ৬১০, মো. মহসিনুজ্জামান খানের কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫০, ফরিদা ইয়াসমিনের কাছ থেকে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ও মো. মাসুদ রানার কাছ থেকে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ টাকা আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি পাঁচজনের কাছ থেকে আদায়যোগ্য শূন্য টাকা দেখানো হয়েছে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, নিরীক্ষা সময় পর্যন্ত হিসাব ধরা হয়েছে বিধায় শূন্য টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এমপিওভুক্ত হয়ে গৃহীত টাকাও তাদেরকে ফেরত দেয়া লাগতে পারে।

টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, এনটিআরসিএর জাল সনদ দিয়ে চাকরি করায় জেলার ১২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো কোনো কাগজ তারা হাতে পাননি।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম সুজন জানান, মন্ত্রণালয় ও মাউশির নিরীক্ষায় বিষয়টি উঠে এসেছে। মাউশি থেকে পত্র পাওয়ার পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৪-১৭ সালে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিরীক্ষা করা হয়। নিরীক্ষায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখা তদন্ত করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬৭৮ জন শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করার বিষয়টি ধরা পড়ে।

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH