ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ - protidinislam.com | protidinislam.com |  
অপরাধ

ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

  প্রতিনিধি ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ , ১১:৫০:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে এখন একজন যাত্রীর তিন-চার ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ

লঞ্চে আগুন, মৃত বেড়ে ৩৬

আর সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরের পিসিআর ল্যাব থেকে করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতার কারণে দিনে তিন-চার হাজার যাত্রীর সময় লাগছে অন্তত ৮-৯ ঘণ্টা করে। এতে যাত্রীদের বিমানবন্দরে অবস্থানকাল বেড়েছে। বেড়েছে ভোগান্তি।

বিমানবন্দরে দীর্ঘ সময় ভারী লাগেজ নিয়ে ঘোরাঘুরি করা কষ্টসাধ্য। তাই দীর্ঘ সময় বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ট্রলিই ভরসা। কিন্তু দেশের প্রধান বিমানবন্দরে এখন দিনে ২০ হাজার যাত্রী পারাপার হয়। তাদের জন্য সচল ট্রলি আছে মাত্র এক হাজার ৪০০।

যাত্রী অনুপাতে ট্রলির সংখ্যা কম এবং করোনা পরীক্ষায় গিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের যাত্রীদের কাছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রলি আটকে থাকাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে ট্রলিসংকট তৈরি হয়েছে। বয়স্ক, অসুস্থ ও শিশু সঙ্গে থাকলে বেশি বিপত্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে অনেকে মাথায় তুলে নেন ভারী মালপত্র।

সংকট কাটাতে বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর দুই দফা কড়া হুঁশিয়ারির পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

গত ১২ ডিসেম্বর এবং ২২ ডিসেম্বর বিমানবন্দর পরিদর্শনকালে দায়িত্বে অবহেলা হলে অভিযুক্তদের ‘চাকরিচ্যুত’ করা হবে—এমন হুঁশিয়ারিও দেন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু পরিদর্শনের এক দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে ট্রলি নিয়ে টানাটানি দেখা গেল।

সরেজমিনে গিয়ে গতকাল দেখা যায়, বিমানবন্দরে গাড়ির দীর্ঘ জট। টার্মিনালের দ্বিতীয় তলার বহির্গমনে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। এই লাইন কখনো কখনো দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

যাত্রীদের বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর জন্য তাদের সঙ্গে একাধিক স্বজন আসার কারণে বিমানবন্দরের সামনে লোকজনের জটলা বেড়েছে। অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে ট্রলি না পেয়ে লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।

সৌদি এয়ারলাইনসের রাত সাড়ে ১০টার এসভি ৮০৩ ফ্লাইটে রিয়াদ যাবেন প্রবাসী কর্মী পাভেল রহমান। বিমানবন্দরে অনেক ‘জটলা’ শুনে তিনি বিকেল ৫টায়ই হাজির হয়েছেন।

টার্মিনাল-১-এ তিন নম্বর গেটের সামনে দুটি বড় ব্যাগ নিয়ে ট্রলির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘শুনেছি, বিমানবন্দরে অনেক সময় লাগছে। অনেকে ফ্লাইট মিস করছে, তাই আতঙ্কে আগেই চলে এসেছি। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেও ট্রলি পেলাম না। এখন ট্রলি ছাড়াই ভারী লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকতে হবে।’

প্রবাসী কর্মীদের সময়মতো ট্রলি না পাওয়ার অভিযোগ তাত্ক্ষণিক প্রতিমন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাত্রীরা কষ্ট পায়, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারো অবহেলার কারণে ট্রলির সংকট হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরটি-পিসিআর ল্যাবে বেশি সময় লাগায় ট্রলি আটকে থাকছে। ৫০ জন ট্রলি সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক উইং কমান্ডার এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাত্রীর চাপ এত বেড়ে গেছে যে ট্রলি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

আমরা আনছি আর ফুরিয়ে যাচ্ছে। পিসিআর ল্যাব রিপোর্ট দিতে দেরি করছে। আমরা অনেক অভিযোগ দিচ্ছি, কোনো কাজ হচ্ছে না। সেখানেও অনেক যাত্রীর কাছে ট্রলি আটকে থাকছে। পিসিআর টেস্টে দেরির দায়ভারও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর চাপানো হচ্ছে।’

এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘যাত্রীর চাপে ট্রলি ম্যানেজ করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের আড়াই হাজার নতুন ট্রলি দেওয়া হবে। এটি দ্রুত এলে ভালো হবে।’
দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট

বিমানবন্দরে ট্রলি সরবরাহের চেষ্টা করে আসছিল। তারা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিনা মূল্যে এই ট্রলি সরবরাহ করতে চাচ্ছিল। শুধু শর্ত ছিল, ট্রলির গায়ে তাদের মনোনীত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে হবে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে ট্রলি নিচ্ছিল না। এরই মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে আড়াই হাজার ট্রলি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) পেয়েছে।

সূত্র জানায়, একটি ট্রলিতে কোনো প্রতিষ্ঠানকে এক মাস বিজ্ঞাপন দিতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে দুই হাজার ৫০০ ট্রলিতে এক মাস বিজ্ঞাপন দিলে মাসে আয় হয় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। বছরে আয় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা।

ট্রলি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, একটি ট্রলি ১২ থেকে ১৫ বছর ব্যবহার করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ১০ বছর ব্যবহার করা গেলেও আয় কমপক্ষে দেড় শ কোটি টাকা। ট্রলি ক্রয় ও সংস্কার করতে ৫০ কোটি টাকা খরচ হলেও বাকি ১০০ কোটি টাকা লাভ।

মোটা অঙ্কের টাকা আয়ের এই বাণিজ্য পেতে সরকারের অনেক প্রভাবশালী ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অফিসে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

পিসিআর পরীক্ষার দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না : সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের শর্ত অনুযায়ী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে যাত্রীদের করোনা

পরীক্ষার কাজ করছে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। টার্মিনালের ভেতরে এসব প্রতিষ্ঠানের বুথে যাত্রীদের নমুনা দিতে দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাতে হয়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা জানান, একই সময়ে একসঙ্গে অনেক যাত্রীর নমুনা নিতে গিয়ে কিছুটা ভোগান্তি হয়। রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে যেসব যাত্রীর সকালে ফ্লাইট রয়েছে, তাঁদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগেই বিমানবন্দরে উপস্থিত হচ্ছেন।

কিছু দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় যাত্রীরা আট থেকে ১২ ঘণ্টা আগেই হাজির হচ্ছেন। অনেকেই বিমানবন্দরের টার্মিনালে রাত যাপন করছেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরের সংস্কারকাজের জন্য প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

নতুন হাইস্পিড কানেক্টিং ট্যাক্সিওয়ে বানানোর জন্য চলতি মাসের ১০ ডিসেম্বর থেকে আগামী ছয় মাস রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। এতে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় নেমে এসেছে বিমানবন্দরে।

ফ্লাইট বিলম্ব : দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন ২৭টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের ১১০ থেকে ১২৮টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে দৈনিক ২০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করে।

বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও এয়ারলাইনসকে সেবা দেওয়ার জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে নিয়োজিত বিমানের পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম নেই। এ ছাড়া বিমানবন্দরে স্থানস্বল্পতা, বোর্ডিং ব্রিজ, বাসস্বল্পতা, ইমিগ্রেশন ও হেলথ ডেস্কে লেকবলের অভাবে ধাপে ধাপে ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের।

শুধু আসা নয়, যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিমানবন্দর থেকে সঠিক সময়ে নির্ধারিত গন্তব্যে ছেড়ে যেতে পারছে না অসংখ্য ফ্লাইট। এতে কানেক্টিং ফ্লাইটে অপেক্ষা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

গত ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে এক ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হয়েছে ১৬টি ফ্লাইট, দুই ও তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে দুটি ফ্লাইট এবং চার ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হয়েছে সাতটি ফ্লাইট।

হিমালয়া এয়ারলাইনসে ১৪ ডিসেম্বর কাঠমাণ্ডু গিয়েছিলেন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার সঞ্জয় চক্রবর্তী। গতকাল ফিরতি ফ্লাইটে নেপাল থেকে ফিরে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসার চেয়ে যাওয়ার ভোগান্তি বেশি মনে হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের গেটে লম্বা লাইন ঠেলে ভেতরে ঢুকে করোনা পরীক্ষা, চেকইন, বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ, ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইটে উঠতে লেগে যায় তিন ঘণ্টা।

এরপর বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনায় ফ্লাইট ছাড়ে আরো দুই ঘণ্টা দেরিতে। ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করলে যাত্রী ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

বুধবার বিমানবন্দরে কর্মরতদের মধ্যে যাঁরা দায়িত্বে অবহেলা করবেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH