নির্দলীয় সরকারের সংলাপ হলে যাবে বিএনপি - protidinislam.com | protidinislam.com |  
জাতীয়

নির্দলীয় সরকারের সংলাপ হলে যাবে বিএনপি

  প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ , ৮:৫৩:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের চলমান সংলাপে এখনো আমন্ত্রণ পায়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও।

তবে তার আগেই বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না তারা। সোমবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত গতকাল বুধবার গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় দলটি।

তবে এর পরও আমন্ত্রণের চিঠি পেলে জবাব দেবে বিএনপি। জবাবে তারা নির্দলীয় সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করবে। দলের নেতারা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেছেন, শুধু এই ইস্যুতে তাঁরা সংলাপ করতে চান।

আওয়ামী লীগ নেতারা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেতে পারেন তাঁরা।

তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এই সংলাপ নিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও একই সময়ে তারাও আমন্ত্রণ পাবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।

কালের কণ্ঠকে এমনটা জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব দলকেই সংলাপে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে মনে করছে তারা।

বিএনপিকে আমন্ত্রণ না জানানোর কোনো কারণ নেই। সংলাপে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও সিপিবি, বাসদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘নেতিবাচক রাজনীতি থেকে সরে এসে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি এগিয়ে আসবে বলে আশা করি।

কেউ সংলাপে আসুক বা না আসুক, নির্বাচন কমিশন গঠন থেমে থাকবে না।’

রাষ্ট্রপতির সংলাপ অর্থহীন এবং এই সংলাপে সংকটের সমাধান হবে না, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এর আগেও নির্বাচন কমিশন গঠনে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, এবারও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে বিএনপি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চায়, নাকি বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়।

সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত গতকাল গণমাধ্যমে জানানো হয়।

সোমবারের বৈঠকের বিষয়ে একাধিক সদস্য বলেন, দুজন সদস্য সংলাপে না যাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। অন্য সদস্যরা সংলাপে না যাওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

স্থায়ী কমিটিতে এ-ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে আলোচনা করতে চাইলে তাতে অংশগ্রহণ করতে চান তাঁরা।

বৈঠকে সংলাপের ব্যাপারে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর মনোভাব কী, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। শরিকদের সঙ্গে কথা বলতে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শরিকদের কেউ সংলাপে যেতে চাইলে আপত্তি করবে না জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, এ সরকারের আমলে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া। তবে নির্দলীয় সরকার গঠন বিষয়ে সংলাপের আয়োজন করলে তাতে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি।

দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, চিঠি পেলে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা করা হবে। যদি রাষ্ট্রপতি চিঠি দেন, তার জবাব দিতে হবে; এটি সৌজন্য।

সংলাপে না যাওয়ার বিষয়টি তখন রাষ্ট্রপতিকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হবে। বিএনপি কী চায়, কোন প্রেক্ষাপটে সংলাপে অংশ নিচ্ছে না, তা-ও তুলে ধরা হবে।

ওই নেতা বলেন, চিঠির জবাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপিসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর চিত্র তুলে ধরবে বিএনপি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট এবং তা বাতিলের পর নির্বাচনী ব্যবস্থায় যে গলদ তৈরি হয়েছে, সে বাস্তবতায় কেন নির্দলীয় সরকার গঠন প্রয়োজন, সে ব্যাপারে বক্তব্য ও প্রস্তাব থাকবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, চিঠির জবাব দেওয়ার বিষয়ে এখনো দলগত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমন্ত্রণ পেলে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করা হবে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, সমস্যা নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে। তাই আগে নির্বাচনব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না।

আগে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। তারপর নির্বাচন কমিশন গঠন করলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে।

বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছিল বিএনপি। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংলাপে গিয়েছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘রকিব উদ্দিন আহমেদ ও নুরুল হুদা কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপে আমরা অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু দিন শেষে দেখা গেল নিজেদের মতো করেই সরকার পুরো প্রক্রিয়া সেরেছে।

আমাদের প্রস্তাব, বক্তব্য ও আলোচনা কিছুই আমলে নেওয়া হয়নি। এখন কারোই বুঝতে বাকি নেই যে সংলাপ ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন নিছক আনুষ্ঠানিকতা। এটি পুরো প্রক্রিয়াকে বৈধ করার পন্থা শুধু।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বিগত দুটি সংলাপে রাষ্ট্রপতিকে ইসি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে পেশ করেছি আমরা।

কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে। এতে স্পষ্ট হয় যে দলীয় সরকার বাতিল করে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, দলের মধ্যে সংলাপে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই আমন্ত্রণ পাওয়া যাবে—এমনটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

তবে সংলাপে কারা অংশ নেবেন, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH