নির্বাচন পরিচালনায় মর্যাদার লড়াই - protidinislam.com | protidinislam.com |  
country-news

নির্বাচন পরিচালনায় মর্যাদার লড়াই

  প্রতিনিধি ৮ জানুয়ারি ২০২২ , ৯:১৭:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন একজন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কামারখালী ও বাগাট ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।

এই দুই ইউনিয়নে তার অধীনে দায়িত্ব পালন করতে হয় ১৮ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে ছয়জন ছিলেন তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

একইভাবে দেশের প্রায় সব ইউপিতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অধীনে ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউপি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।

অনেক স্থানে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে শাস্তিও দিয়েছে। তবে সমস্যার সমাধান হয়নি।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন সমকালকে বলেন, ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা হিসেবে সরকার আমাদের যে মর্যাদা নির্ধারণ করেছে, নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অধীনে দায়িত্ব দিয়ে সেটি নষ্ট হচ্ছে। এটি অবশ্যই অযৌক্তিক ও অসম্মানজনক।

চট্টগ্রামের হাজী এ বি কলেজের সহকারী এই অধ্যাপক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে- জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। তাই জ্যেষ্ঠ ও ক্যাডারভুক্তদের মধ্যে থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। সারাদেশে এমন কর্মকর্তাদের একেকজনকে একাধিক ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তাদের অধীনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে কৃষি ও শিক্ষা বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কনিষ্ঠদের অধীনে থেকে মাত্র একটি কেন্দ্রের দেখভাল করছেন।

ফেনীর পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানকে ইউপি নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কনিষ্ঠ কর্মকর্তার অধীনে তিনি দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর ইসি নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান সমকালকে বলেন, বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক দেখছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম সমকালকে বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে সম্মান ও মর্যাদাজনক পদে কাজ করেন। কনিষ্ঠদের অধীনে দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয়নি। নির্বাচন কমিশনকেই বিষয়টি সমাধান করা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু সেটা তারা করেনি।

একইভাবে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিপুল পাল, সহকারী অধ্যাপক সুজন চন্দ্র পাল এবং ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরিফুর রহমানকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গৌরীপুর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিপুল পাল সমকালকে বলেন, ভোটগ্রহণের দিন তার চাচা মারা গিয়েছিলেন। এজন্য তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন, কিন্তু দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের কর্মকর্তারা বর্তমানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে কাজ করছেন। আমাদের চেয়ে ১০ বছরের বেশি জুনিয়ররা নূ্যনতম সম্মান দিয়ে কথা বলেন না।’

ফরিদপুরের মধুখালীর সরকারি আইন উদ্দীন কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ হাসিবুল হাসান, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক আশরাফুল আলম, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. খায়রুল ইসলাম, বরিশালের সরকারি হাতেম আলী কলেজের প্রভাষক অলিউল ইসলাম, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফরহাদ হোসেন, শেরপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক শাহিদুল ইসলাম, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের প্রভাষক আজমল হোসেন, সিরাজগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মমিন, পঞ্চগড় সরকারি কলেজের মোশাররফ হোসেনকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অধীনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আইনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এখানে ক্যাডার, নন-ক্যাডার ভাগ করতে গেলে কর্মকর্তা পাওয়ায় যাবে না।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিমুল্লাহ খন্দকার সমকালকে বলেন, কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অধীনে দায়িত্ব দেবে- এটা অবশ্যই আপত্তিকর। এটি পরিহার করা উচিত। নির্বাচন কমিশন যদি সতর্ক হয় এবং যারা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তাদের যদি মনে করিয়ে দেয় তাহলে বিষয়টি সমাধান হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে চান। তবে জুনিয়রের অধীনে নয়।
সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ইউপি নির্বাচনে ডিসি ও ইউএনওদের ভূমিকা থাকে বেশি। সব বিষয়ে তাদের অবগত করতে হয়।

ম্যাজিস্ট্রেসির দায়িত্বও পালন করেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা মূলত আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের ক্ষোভ থেকেই কৌশলে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের অধীনে দায়িত্ব দেন।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিয়োগ করেন ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের। একাধিক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ডিসি-ইউএনওদের পরামর্শেই তারা এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিব ভালো বলতে পারবেন।

কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অধীনে জ্যেষ্ঠদের কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।

তিনি সমকালকে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের পদমর্যাদার দিকে খেয়াল রাখার বিষয়ে সব সময় বলা হয়। এরপরও অনেক কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে গিয়ে দু-একটা ভুল হয়ে যায়। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।’

তবে তিনি বলেন, এরপরও যখন কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন তাকে মানতেই হবে। কারণ, তপশিল ঘোষণার পর নির্বাহী বিভাগ ইসির অধীনে চলে আসে।খবর সমকাল

ENGLISH