বিনা ভোটে নির্বাচিত ২০% প্রার্থী - protidinislam.com | protidinislam.com |  
জাতীয়

বিনা ভোটে নির্বাচিত ২০% প্রার্থী

  প্রতিনিধি ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ১০:০১:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ দ্বিতীয় দফায় ১৬০টিতে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে আজ সোমবার শেষ হচ্ছে প্রথম ধাপের ৩৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাধারণ নির্বাচন।

এর মধ্যে ৭২টি ইউপিতে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

আজ অনুষ্ঠেয় ইউপিগুলোর মধ্যে ৪৪টিতেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে আছেন।

এর আগের দফায় ভোটগ্রহণ হওয়া ইউপিগুলোর মধ্যে ২৮টিতে একইভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ এই ধাপে চেয়ারম্যান পদে ২০ শতাংশ প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেন।

গত ৩ মার্চ প্রথম ধাপে ৩৭১টি ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী ভোট হওয়ার কথা ছিল গত ১১ এপ্রিল। কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে ওই দিনের ভোট স্থগিত করা হয়। পরে গত ২১ জুন ২০৪টি ইউপিতে ভোট হয়।

বাকি ১৬৭টি ইউপির মধ্যে আজ ছয় জেলার ২৩ উপজেলার মোট ১৬০টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। অন্য সাতটির মধ্যে পাঁচটি ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায়, একটিতে মামলার কারণে এবং কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন ইউপিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আপাতত ভোট হচ্ছে না।

বাকি ১২৫টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৫০০ জন। এসব ইউপিতে কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এবং এই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে।

১১টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে।

নির্বাচন কমিশন আশা করছে, আজকের ভোট স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। গতকাল বিকেলে নির্বাচন ভবনে ইউপি নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘আমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছি, তাতে আশা করতে পারি ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।’

বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং অফিসারদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলেছি। তারাও আমাদের কথা দিয়েছেন।’

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যেখানে একজন ছাড়া কেউ প্রার্থী হন না, সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটবেই।’

প্রথম ধাপের এ নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে আছে প্রায় ছয় মাস আগে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, এ নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে।

স্থানীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ ১৪৯ জন ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। ৭২টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে গেছেন।

এ ক্ষেত্রে গতবারের মতোই শীর্ষে রয়েছে বাগেরহাট। বাগেরহাটে ৩৯টি ইউপিতে এ ঘটনা ঘটেছে। গতবারের নির্বাচনেও বাগেরহাট এ ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল।

এ ছাড়া বরিশালে ১৪টি, পটুয়াখালীতে দুটি, পিরোজপুরে চারটি, ভোলায় সাতটি, গাজীপুরে দুটি ও চট্টগ্রামে চারটি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার এ ঘটনা ঘটেছে।

চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৬৮ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে আটজন একইভাবে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন বা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন এক হাজার ৮০ জন। তাঁদের অনেকের ভয়ভীতি দেখিয়ে বা জোরপূর্বক নির্বাচন থেকে সরানোর অভিযোগ আছে।

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের প্রথম এই ধাপে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অংশ নিয়েছে মাত্র ১১টি। বিএনপিসহ নিবন্ধিত বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

এ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে অংশ না নেওয়ার ঘোষণায় সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। যদিও বিএনপির প্রার্থীরাও বেশ কিছু ইউপিতে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

বিনা ভোটের ৭২ চেয়ারম্যান : যে ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সেই ইউপিগুলো হচ্ছে পটুয়াখালীর বাউফলের কালিশূরী ও কালাইয়া, বরিশালের বাকেরগঞ্জের দুধল, উজিরপুরের শোলক, মুলাদীর মুলাদী, গৌরনদীর বাটাজোড়, খানজাপুর, বার্থি, চাদশী, মাহিলারা, নলচিড়া, বানারীপাড়ার বিশারকান্দি, ইলুহার, সালিয়াবাকপুর, বানারীপাড়া ও উদয়কাঠি। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার তেলিখালী। ঝালকাঠি সদরের কেওড়া, নলছিটির নাচনমহল ও রাজাপুরের গালুয়া। ভোলার বোরহান উদ্দিনের গঙ্গাপুর, চরফ্যাশনের চরমাদ্রাজ, চরকলমি, হাজারীগঞ্জ, এওয়াজপুর ও জাহানপুর। খুলনা দাকোপের লাউডোবা। বাগেরহাটের ফকিরহাটের বেতাগা, পিলজংগ, ফকিরহাট ও নলধা মৌভোগ; মোল্লাহাটের উদয়পুর, চুনখোলা, কোদালিয়া, আটজুড়ি, গাওলা ও কুলিয়া; চিতলমারীর হিজলা, শিবপুর, চরবানিয়ারী ও সন্তোষপুর; কচুয়ার গজালিয়া, গোপালপুর, রাড়ীপাড়া ও বাধাল; রামপালের হুড়কা, মল্লিকের বেড়, বাঁশতলী, রামপাল ও ভোজপাতিয়া; মোংলার চাঁদপাই, বুড়িরডাঙ্গা, চিলা, মিঠাখালী, সোনাইলতলা ও সুন্দরবন; মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া; শরণখোলার খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, সাউথখালী, সদরের বারুইপাড়া, বেমরতা, বিষ্ণুপুর, ডেমা, কাড়াপাড়া ও খানপুর। গাজীপুর কালীগঞ্জের তুমুলিয়া, মোক্তারপুর, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপের বাউরিয়া, সারিকাইত, মগধরা ও হারামিয়া।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালের প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ৫৪ জন।

এ সময় প্রথম ধাপে ৭১২টি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছিল। সে তুলনায় এবার চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার হার বেশি। সে সময় ৭.৫৮ শতাংশ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন, এবার যা ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

৯ পৌরসভায় ভোট : ইউপি নির্বাচন ছাড়াও করোনার কারণে স্থগিত রাখা ষষ্ঠ ধাপের ৯টি পৌরসভায় নির্বাচন এবং দুটি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে আজ। ৯টি পৌরসভার মধ্যে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও নোয়াখালীর কবিরহাটে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র পদে নির্বাচন হচ্ছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও মহেশখালী; ফেনীর সোনাগাজী, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও যশোরের নওয়াপাড়ায়। এই ছয়টি পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোট ২৭ জন। এসব পৌরসভায় ভোট হবে ইভিএমে।

বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ : এদিকে নির্বাচনের আগের দিন গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর হাতিয়ার বুড়ির চর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ও একই দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুড়ির চর ইউনিয়নের ইব্রাহিম মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) ফখরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করে বলেছেন, হামলাকারীরা তাঁর সমর্থক জহির উদ্দিন বাবরের হাতের কবজি কেটে দিয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন নৌকার প্রার্থী জিয়া আলী মোবারক। তিনি বলেন, ফখরুলের মিছিল থেকে তাঁর লোকজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

নির্বাচন স্থগিত : বাগেরহাটের শরণখোলার ধানসাগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদের নির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় হাইকোর্টে মামলাটি করেছিলেন সদস্য প্রার্থী মো. জামাল আহমেদ। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচনের আগের দিন ভোট স্থগিতের ঘোষণায় হতাশ হয়েছেন অন্য চার প্রার্থী।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে স্থানীয় প্রতিনিধিরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন)খবর কালের কন্ঠ

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH