এমপিও দেওয়ার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও যেকারণে হতাশ ৯০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী - protidinislam.com | protidinislam.com |  
অর্থনীতি

এমপিও দেওয়ার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও যেকারণে হতাশ ৯০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী

  প্রতিনিধি ৩ অক্টোবর ২০২১ , ১০:৩৯:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার-এমপিও) জন্য দুই বছর পর আবারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে দেওয়া হবে স্তর পরিবর্তনের এমপিও।

আরো পড়ুনঃ

এমপিওভুক্তির জন্য যেসকল শর্ত পুরণ করতে হবে

গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে আবেদন চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ১০ অক্টোবর থেকে অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরু হবে। আবেদন নেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর। আবেদন এবার অনলাইনে প্রসেস করে মূল্যায়ন করা হবে।

এরপর গ্রেডিং করা হবে। সবশেষে সর্বোচ্চ গ্রেডপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তি দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হবে।

এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়ার আগে গত মার্চে ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০২১’ চূড়ান্ত করা হয়।

নতুন এই নীতিমালা অনুসারে এবারের এমপিও দেওয়া হবে। এমপিওভুক্তির জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করায় সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষকরা খুশি হলেও নতুন নীতিমালায় এমপিওর শর্ত ‘কঠিন’ করায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পড়েছেন অন্তত ৯০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী।

প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় তারা বছরের পর বছর চাতক পাখির মতো চেয়ে রয়েছেন।

এমপিওভুক্ত হওয়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মাসে বেতনের মূল অংশ ও এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া আর ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন।

এর বাইরে দুই ঈদে শিক্ষকরা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ আর কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা পান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (www.shed.gov.bd), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (www.dshe.gov.bd) এবং বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে (www.banbeis.gov.bd) ‘অনলাইন এমপিও অ্যাপ্লিকেশন’ শিরোনামে প্রদর্শিত লিংকের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন সরাসরি, ই-মেইল বা পত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে না।

এতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সব কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হবে।

এই পদ্ধতিতে নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হবে।

সর্বশেষ দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দীর্ঘ ৯ বছর পর দুই হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার।

সেবার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) ৪৩৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) ১০৮টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণি স্তরের প্রতিষ্ঠান ৮৮৭টি, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৮টি, কলেজ (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ৯৩টি এবং ডিগ্রি কলেজ ৫৬টি এমপিওভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া মাদ্রাসা ছিল ৫৫৭টি। তখন কোনো মন্ত্রীর এমপিওর ডিও লেটার আমলে নেওয়া হয়নি। এর আগে ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এমপিওভুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করেছেন।

বর্তমানে সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে সরকার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের পেছনে বছরে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৬৯ লাখ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ৬৯ লাখ টাকা, আর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাগে প্রায় ১৬ লাখ টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৮ হাজার ৯১০টি। এর মধ্যে স্কুল ১৮ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি, মাদ্রাসা সাত হাজার ৬১৮টি।

এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ সরকার প্রতিমাসে ৯৪১ কোটি টাকা ব্যয় করছে।

কত প্রতিষ্ঠান অপেক্ষায় :এই মুহূর্তে সারাদেশের ছয় হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক নতুন, বাকিগুলো স্তর পরিবর্তনের এমপিওর জন্য আবেদনের অপেক্ষায়।

নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক পর্যন্ত, মাধ্যমিক বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ডিগ্রি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হওয়াকে শিক্ষা প্রশাসনে ‘স্তর পরিবর্তন’ বলা হয়।

সারাদেশে এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের সংগঠন ‘নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনে’র সভাপতি ও খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গায় অবস্থিত খুলনা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার সমকালকে বলেন, তাদের হিসাবে নতুন প্রতিষ্ঠান ও স্তর পরিবর্তন মিলিয়ে এ মুহূর্তে ৬ হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলোতে শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন ৮৫ থেকে ৯০ হাজার।

তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন প্রতিবছর এমপিও দেওয়া হবে। ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট সর্বশেষ এমপিওর আবেদন নেওয়া হয়েছিল।

এরই মাঝে পার হয়ে গেল ৩টি বছর। এখন আবার আবেদন নেওয়া হবে। এতোদিন পর পর এমপিও দেওয়া হলে বহু প্রতিষ্ঠানের অপেক্ষার পালা কেবলই বাড়তে থাকে।

যেভাবে হবে এমপিও:শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এবারও গতবারের মতো বিশেষায়িত অটোমেটেড সফটওয়্যারে এমপিওর আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তৈরি করা এই বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া ও বাছাই করা হবে।

এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০২১ এর আরোপিত শর্তগুলো পূরণ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা করা হবে। এমপিও নীতিমালা-২০২১-এ এমপিওভুক্তির জন্য পাঁচটি স্তর নির্ধারণ করা হয়। স্তরগুলো হলো- নিম্ন মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম), মাধ্যমিক (নবম থেকে দশম), উচ্চমাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ), কলেজ (একাদশ থেকে দ্বাদশ), স্নাতক (পাস) তথা ডিগ্রি কলেজ (একাদশ থেকে পঞ্চদশ)।

এমপিওভুক্তি পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রেডিংয়ের বিধান রাখা হয়েছে এবার। তিন ক্যাটাগরিতে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে এ গ্রেডিং হবে। সেগুলো হলো- শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হারে ৪০ নম্বর।

এ সকল শর্ত পূরণ করতে পারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পাবার জন্য বিবেচিত হবে। তবে এ নীতিমালার ২২ ধারায় বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের বিধানও রাখা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে- শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, ছিটমহল, বস্তি এলাকা, নারীশিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসরগোষ্ঠী যেমন- প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, চারুকলা, বিকেএসপি, সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিলযোগ্য।

কঠিন শর্তে উদ্বেগ :এবারের নতুন এমপিও নীতিমালায় শর্ত কঠিন করায় উদ্বেগে রয়েছেন সংশ্নিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীরা। ‘নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনে’র সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, নতুন নীতিমালা শিক্ষকদের গলার ফাঁস হয়েছে।

সবচেয়ে কঠিন হয়েছে কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়া। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ক্ষেত্রে আগে তিন গ্রুপ (বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও মানবিক) মিলে ৬০ জন শিক্ষার্থী থাকলেই হতো।

নতুন নীতিমালায় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিটি গ্রুপে আলাদা ৬০ জন করে মোট ১৮০ জন ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে। এই শর্তের কারণে গ্রামগঞ্জের বহু কলেজ আর এমপিওভুক্ত হতে পারবে না।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়ন আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় জানান, শিক্ষার্থী ও পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হারের শর্তের বেড়াজালে বহু প্রতিষ্ঠান আবেদন করেও এমপিওভুক্ত হতে পারবে না।

জানা গেছে, নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ-অষ্টম) বিদ্যালয় এমপিওভুক্তি পেতে শহর ও মফস্বলের নূ্যনতম ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে যথাক্রমে ১২০ জন ও ৯০ জন।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ-দশম) ক্ষেত্রে শহর ও মফস্বলে এ সংখ্যা যথাক্রমে ২০০ জন ও ১৫০ জন। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) তা ৪২০ জন ও ৩২০ জন।

উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে (একাদশ ও দ্বাদশ নূ্যনতম ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে শহরে ১৮০ জন, মফস্বলে ১৪০ জন। স্নাতক (পাস) কলেজে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৯০ জন ও ৪২৫ জন (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখাসহ)।

একইভাবে এমপিওভুক্তি পেতে পাসের হারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হার নির্ধারণ করা হয়েছে এবার। জেএসসিতে শহর, জেলা সদর/পৌরসভা এবং মফস্বল এই তিন ক্যাটাগরিতে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাসের নূ্যনতম হার হতে হবে যথাক্রমে ৭০, ৬৫ ও ৬০ শতাংশ। এসএসসিতে তা ৭০, ৬০ ও ৫৫ শতাংশ।

এইচএসসিতে শহরে ৬৫, জেলা সদর ও পৌরসভায় ৫৫ ও মফস্বলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাস করতে

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH