যে কারণে ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - protidinislam.com | protidinislam.com |  
অর্থনীতি

যে কারণে ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

  প্রতিনিধি ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ , ২:২৬:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্কঃ নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও) তদবির সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাত্র আড়াইশো কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও আট হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে মন্ত্রণালয়ে।

অর্থ বরাদ্দের চেয়ে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমপিও ঘোষণার কৌশল নির্ধারণ করতে পারছে না মন্ত্রণালয়। আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিয়েও লুকোচুরি করছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও শঙ্কিত।

যোগ্যতা অর্জনের পরও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ছুটছেন মন্ত্রী-এমপিদের দ্বারে দ্বারে। নিজ নির্বাচনী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অনানুষ্ঠানিক পত্রের (ডিও লেটার) স্তুপ জমেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য সফটওয়ারের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। গত ১০ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের অধীনে স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য প্রায় আট হাজার আবেদন জমা পড়েছে।

এর মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে তিন হাজার ৯০৩টি আবেদন পড়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে আবেদন নিয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি ডিগ্রি কলেজ এমপিওভুক্ত করতে বছরে সরকারের ব্যয় হয় ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ৬৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা, নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ টাকা। তবে চলতি অর্থ বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য দুই শত এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচশত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যাবে। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বাকি যোগ্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্বান্ত নিতে পারছে না মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে স্কুল-কলেজ এমপিও যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) ফৌজিয়া জাফরীন গত বুধবার বলেন, আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই চলছে। এখনই বলা যাচ্ছে না এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কতগুলো প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা অর্জন করেছে। অতিরিক্ত অর্থ দরকার হলে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবো।

বাড়তি অর্থ বরাদ্দ না হলে ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের শীর্ষে যেসব প্রতিষ্ঠান থাকবে সেগুলো এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে এটিও চূড়ান্ত না। যাচাই-বাছাই শেষে আমরা সিদ্বান্ত নিবো।

কতগুলো আবেদন জমা পড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আড়াই থেকে তিন হাজার হবে। কৌশলগত কারণে সঠিক সংখ্যা বলা যাবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের (মন্ত্রী-এমপি) অনেক চাপ রয়েছে। যত চাপই থাক নীতিমালার বাইরে কিছু করা হবে না।

সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে গত ১৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে সংশ্লিষ্ট জেলার আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি ও অবকাঠামো যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।

আর শিক্ষা বোর্ডগুলোকে প্রতিষ্ঠানের বিগত তিন বছরের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, একডেমিক ও পাঠদানের স্বীকৃতির তথ্য যাচাই করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়নি।

এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হবে। স্বীকৃতির তিন বছর পার হলে এমপিওর আবেদনের শর্ত নতুন নীতিমালায় তুলে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান সরকারের সময়ে প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য এ শর্ত বাতিল করা হয়েছে। ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর), পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর) এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার (৪০ নম্বর)। তবে এ নীতিমালার ২২ ধারায় বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে।

এ ধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাওড়, চরাঞ্চল, ছিটমহল, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী (প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি) এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, চারুকলা, বিকেএসপি, সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিলযোগ্য। এই বিশেষ সুবিধায় সরকারের প্রভাবশালী শত শত ব্যাক্তি নিজের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী বরাবর।

প্রভাবশালীদের ডিও লেটারের স্তুপ: মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সরকারের প্রভাবশালী পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি তার নিজ নির্বাচনী এলাকা শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ-৩) উপজেলার আব্দুল মজিদ কলেজ, সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ইশাকপুর শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় হাওর এলাকা বিবেচনায় এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার কাজিম উদ্দিন চৌধুরী কলেজটি এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদ এমপি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া পদুয়া ডিগ্রি কলেজটি (উচ্চমাধ্যমিক স্তর) সীমান্তবর্তী ও পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় ডিও লেটার দিয়েছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি দৌলতপুর কলেজের বিএম শাখা এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি মো. নজরুল ইসলাম নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত আড়াই হাজার উপজেলার গোপালদী নজরুল ইসলাম বাবু কলেজটি বিএম শাখা এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন।

বগুড়া-২ আসনের এমপি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল বালিকা বিদ্যালয়টি নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন।

সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩০ এর এমপি গ্লোরিয়া ঝর্ণা খুলনার দাকোপ উপজেলার জেপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চালনা মহাবিদ্যালয় ভৌগিলভাবে বিপদ জনক অবস্থানের থাকায় এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। নওগাঁ-৬ আসনের এমপি মো. আনোয়ার হোসেন (হেলাল) আত্রাই উপজেলার নন্দনালী ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির জন্য ডিও দিয়েছেন। বিরোধী দলীয় এমপি ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবল হক চুন্নু এমপিও নীতিমালার ২২ ধারায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিনা উদয়ন কলেজটিকলেজটি এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। এছাড়াও আরো অসংখ্য মন্ত্রী-এমপি এমপিওভুক্তির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন।

জানতে চাইলে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার আজকালের খবরকে বলেন, সরকারি বিধিবিধান মেনেই শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়োগে পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

অনেকে কষ্টে পেশা পরিবর্তন করেছেন। শর্তের বেড়া জাল বা অর্থ সংকটের কারণে এবার কোনো প্রতিষ্ঠান এবারও বাদ পড়লে প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় যাবে। আমাদের দাবি যখন যে প্রতিষ্ঠান স্থাপন হয়েছে তখনকার নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত করা হোক। নীতিমালার কঠিন শর্তের কারণে ডিগ্রিস্তরের পাঁচ শতাধিক যোগ্য প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারেনি উল্লেখ

করে তিনি বলেন, এমপিও নীতিমালায় ডিগ্রি স্তরের বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার মধ্যে কমপক্ষে দুটি শাখা না থাকলে করা যাবে না। আগে এ শর্ত ছিল না। নতুন শর্তের কারণে ডিগ্রি স্তরের পাঁচ শতাধিক যোগ্য প্রতিষ্ঠান আবেদনই করতে পারেনি। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দীর্ঘ নয় বছর পর দুই হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে সরকার।

অনেক বিতকির্ত ও অযোগ্য অযোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর যাচাই-বাছাই করে শতাধিক প্রতিষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছিল। ওই বছর যোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাবে সোয় চারশ কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH