প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বিশাল সুখবর দিলেন সরকার - protidinislam.com | protidinislam.com |  
জাতীয়

প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বিশাল সুখবর দিলেন সরকার

  প্রতিনিধি ১৫ জুন ২০২৩ , ৬:০০:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

Spread the love

ইসলাম ডেস্ক: বন্যা, খরা আর নানামুখী সমস্যা নিয়ে চরাঞ্চলে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। শুকনো মৌসুমে কখনো নৌকায়, কখনো দীর্ঘ বালু পথ পায়ে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষকদের। এসব নানাবিধ সমস্যা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই ভুক্তভোগী শিক্ষকদের।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের পথ ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি লঞ্চঘাট। এই ঘাট থেকেই প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টায় যাওয়া যায় চরের স্কুলগুলোতে। এসময়ে লঞ্চঘাট দিয়ে চারটি নৌকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষক। এসব শিক্ষকদের দাবি তাদের জন্য চরভাতা চালু করা হলে তাদের এই কষ্টটা কিছুটা লাঘব হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসও দ্রুত সরকারিভাবে চরভাতা চালু হবে বলে নিশ্চিত করেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার চার উপজেলার চরাঞ্চলের সদরে ১৫টি, ফুলছড়িতে ৫৮টি, সাঘাটায় ১৩টি ও সুন্দরগঞ্জের ৩০টিসহ মোট ১১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। চরাঞ্চলের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই ১১৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য সদরে ৫৩ জন, ফুলছড়িতে ১৮৫ জন, সাঘাটায় ৩৭ জন এবং সুন্দরগঞ্জে ৭৩ জনসহ মোট শিক্ষক রয়েছেন ৩৪৮ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন কমবেশি তিন শতাধিক শিক্ষককে চরাঞ্চলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদ আর গরমে নৌকায় ছাতি মাথায় করে স্কুল থেকে ফিরছেন শিক্ষকরা। সেখানেই কথা হয় ভাটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে নৌকায় করে স্কুলে যাই। নৌকা থেকে নামার পর অনেককেই এক/দুই কিলোমিটার সাইকেলে কিংবা হেঁটেও যেতে হয়। প্রতিদিন নৌকা ভাড়া হিসাব করলে মাসে ৩ হাজার টাকার উপরে লাগে। এভাবে কষ্ট করে স্কুলে যাওয়ার পর পাঠদানের আর এনার্জি থাকে না।’

আরেক শিক্ষক অঞ্জনা রানি। আনন্দবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ান তিনি। তিনিবলেন, ‘আমরা এত কষ্ট করে, এত টাকা খরচ করে স্কুলে যাই। খাওয়া-দাওয়া, নৌকাভাড়াসহ প্রতিদিন দুইশ টাকার বেশি খরচ হয়। চরভাতা দেওয়া হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’

উত্তরচর চৌমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবিত রানি বর্মণ। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমার ৯ মাসের একটা সন্তান আছে। সকাল ৮টায় ঘাটে আসার আগে সন্তানের খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও নিজের প্রস্তুতি নিতে হয়। ৮টায় আসার পর বাড়ি ফিরতে সেই বিকেল ৫টা বেজে যায় ৷ এইসময় সন্তানের কোনো সমস্যা হলে মা হিসেবে কিছুই করার নেই’।

দ্রুত এবং নিরাপদ যাত্রার জন্য তিনি সরকারিভাবে স্পিডবোটের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

বালাসী লঞ্চঘাটে নিয়মিত নৌকা নিয়ে শিক্ষকদের পারাপার করেন চার নৌকার চারজন মাঝি। তাদেরই একজন পূর্ব কঞ্চিপাড়া গ্রামের জামিল মিয়া। তিনি বলেন, ‘এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ধলিপাটাদোহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম জিগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষককে নিয়ে তিনি সকালে স্কুলে গিয়েছিলেন। রিজার্ভ ভাড়া হিসেবে তারা ১৩০০ টাকা দিয়েছেন।’

বাকি তিনজন মাঝি হলেন, মোনতাজ মিয়া, মোশাররফ হোসেন ও জহুরুল মিয়া। এই চার নৌকায় শুধু শিক্ষকরা যাতায়াত করেন বলে স্থানীয়ভাবে এই নৌকা চারটি ‘মাস্টারের নাও’ হিসেবেই পরিচিত পেয়েছে।

এব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই সমস্যাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতীয় সমস্যা। আমরা কয়েকটি স্কুল নিয়ে একটি আবাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাচ্ছি। যাতে করে তারা সেখানে থেকেও ভালোভাবে পাঠদান করাতে পারেন।’

তবে, দ্রুতই সরকারিভাবে তাদের জন্য চরভাতা চালু হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

আরও খবর

Sponsered content

ENGLISH